রাসায়নিক পরিবর্তন
রাসায়নিক পরিবর্তন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি বা একাধিক রাসায়নিক পদার্থ নতুন রাসায়নিক গঠনে রূপান্তরিত হয়। এই পরিবর্তনে নতুন উপাদান সৃষ্টি হয় এবং এটি প্রাথমিক পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তিত করে।
রাসায়নিক পরিবর্তনের বৈশিষ্ট্য
- নতুন পদার্থের গঠন: রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়।
- অত্যধিক শক্তি মুক্তি বা শোষণ: রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার সময় শক্তির মুক্তি বা শোষণ ঘটে, যা তাপীয় বা আলো আকারে হতে পারে।
- অচল সত্তা: রাসায়নিক পরিবর্তনে পুরনো পদার্থের বৈশিষ্ট্য সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যায় এবং নতুন পদার্থের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে।
রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার উদাহরণ
- জ্বলন প্রতিক্রিয়া: কার্বন (C) এবং অক্সিজেন (O₂) এর মধ্যে প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) এবং পানি (H₂O) তৈরি হয়।
- অ্যাসিড-বেস প্রতিক্রিয়া: হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) এবং সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH) এর প্রতিক্রিয়ায় সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) এবং পানি (H₂O) তৈরি হয়।
রাসায়নিক সমীকরণ
রাসায়নিক পরিবর্তন বোঝার জন্য রাসায়নিক সমীকরণ ব্যবহৃত হয়। এই সমীকরণে প্রতিক্রিয়া এবং ফলস্বরূপ নতুন পদার্থের গঠন প্রদর্শিত হয়।
রাসায়নিক পরিবর্তনের চিহ্ন
রাসায়নিক পরিবর্তনের চিহ্নগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে: রঙের পরিবর্তন, গ্যাস নির্গমন, তাপ উৎপন্ন হওয়া অথবা শোষণ হওয়া, এবং কঠিন পদার্থ (অবসাদ) গঠন।
আরো পড়ুন :
গ্রিন কেমিস্ট্রি, বা পরিবেশবান্ধব রসায়ন
রসায়নের একটি শাখা যা রাসায়নিক প্রক্রিয়া ও পণ্যগুলোর পরিবেশগত প্রভাব কমানোর জন্য ডিজাইন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হলো রসায়ন বিজ্ঞানকে এমনভাবে প্রয়োগ করা যাতে পরিবেশের ক্ষতি কম হয় এবং মানবস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকে।
গ্রিন কেমিস্ট্রির মূল ধারণাগুলো হলো:
- সতেজ বিকল্পের ব্যবহার: রাসায়নিক প্রক্রিয়ার জন্য কম ক্ষতিকর এবং পরিবেশবান্ধব উপাদান ব্যবহার করা।
- শক্তির দক্ষতা: রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় কম শক্তি ব্যবহার করা, যাতে পরিবেশে কম তাপমাত্রা বা চাপ প্রয়োজন হয়।
- নির্বিচারে ব্যবহার:পরিমাণমতো রসায়নিক ব্যবহার করা যাতে কোনো বর্জ্য না হয় বা তা কম হয়।
- অবশিষ্ট পদার্থের ব্যবহার: রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ায় যদি কোনো বর্জ্য উৎপন্ন হয়, তাহলে সেই বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহার করা বা নিরাপদে নিস্তরণ করা।
- সতেজ নির্গমন: রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া থেকে বর্জ্য পদার্থ ও গ্যাসের নির্গমন কমানো।
- বহু-ব্যবহারযোগ্য ক্যাটালিস্ট: এমন ক্যাটালিস্ট ব্যবহার করা যা একাধিকবার পুনরায় ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়।
- সতেজ পণ্য ডিজাইন: এমন রাসায়নিক পণ্য ডিজাইন করা যা ব্যবহার শেষে দ্রুত মাটিতে মিশে যায় বা সহজে নিষ্কাশিত হয়।
- নিরাপদ উপাদান ডিজাইন: রাসায়নিক পদার্থ এমনভাবে ডিজাইন করা যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য নিরাপদ।
লা শাতেলিয়ার নীতি (Le Chatelier’s Principle)
রসায়নের একটি মৌলিক নীতি যা রাসায়নিক প্রতিক্রিয়ার সাম্যাবস্থা বা equilibrium সম্পর্কিত। এই নীতির মূল কথা হলো:
যখন কোনো রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া সাম্যাবস্থায় থাকে এবং কোনো বাহ্যিক পরিবর্তন, যেমন চাপ, তাপমাত্রা, বা কনসেন্ট্রেশন পরিবর্তন করা হয়, তখন প্রতিক্রিয়া এমনভাবে প্রতিক্রিয়া করবে যাতে নতুন অবস্থায় সাম্যাবস্থা পুনরায় অর্জিত হয়।
এটি তিনটি মূল উপাদানে প্রয়োগ করা হয়:
- তাপমাত্রার পরিবর্তন: যদি তাপমাত্রা বাড়ানো হয়, তখন প্রতিক্রিয়া এমনভাবে চলবে যাতে তাপমাত্রার বৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। অর্থাৎ, যদি প্রতিক্রিয়া তাপীয় হয় (endothermic), তাপমাত্রা বাড়ানো হলে প্রতিক্রিয়া সঞ্চালিত হবে যাতে তাপ শোষণ হয়। যদি প্রতিক্রিয়া নির্গমনের (exothermic) হয়, তাপমাত্রা বাড়ানো হলে প্রতিক্রিয়া সঞ্চালিত হবে যাতে তাপ নির্গমন হয়।
- চাপের পরিবর্তন: চাপ বাড়ানোর ক্ষেত্রে, প্রতিক্রিয়া এমনভাবে চলবে যাতে চাপ কমানো হয়। অর্থাৎ, যদি কোনো প্রতিক্রিয়াতে গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, চাপ বাড়ালে প্রতিক্রিয়া কম গ্যাস উৎপন্ন করবে। যদি গ্যাসের পরিমাণ কমে, চাপ বাড়ালে প্রতিক্রিয়া গ্যাস উৎপন্ন করবে।
- কনসেন্ট্রেশনের পরিবর্তন: যদি কোনো রাসায়নিকের কনসেন্ট্রেশন বাড়ানো হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়া সেসব রাসায়নিকের নতুন প্রোডাক্ট তৈরি করবে যাতে তাদের কনসেন্ট্রেশন কমানো যায়। যদি কোনো রাসায়নিকের কনসেন্ট্রেশন কমানো হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়া সেই রাসায়নিকের পুনর্নির্মাণ করবে।
উদাহরণ:
- অ্যাসিড-বেস প্রতিক্রিয়া: H₂CO₃ ⇌ CO₂ + H₂O
যদি CO₂ গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে প্রতিক্রিয়া বামদিকে চলবে, অর্থাৎ H₂CO₃ এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
- অ্যামোনিয়া উৎপাদন প্রতিক্রিয়া: N₂ + 3H₂ ⇌ 2NH₃
যদি চাপ বাড়ানো হয়, কারণ উৎপন্ন NH₃ গ্যাসের সংখ্যা কম (2 মোল NH₃) যা প্রাথমিক গ্যাসের সংখ্যা থেকে (4 মোল গ্যাস), তাই চাপ বাড়ালে প্রতিক্রিয়া NH₃ উৎপন্ন করবে।
লা শাতেলিয়ার নীতি রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া ও তাদের সাম্যাবস্থা বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়া কেমন আচরণ করবে তা পূর্বাভাস করতে সাহায্য করে।
রাসায়নিক পরিবর্তন সম্পর্কে বাকি নোটটি পড়তে আমাদের লেকচার শীটটি ডাউনলোড করুন :