একতরফা দাখিলা পদ্ধতি

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র একতরফা দাখিলা পদ্ধতি নোট PDF Download

Advertisements

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র একতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকে প্রতিবছর একটি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকে। এই লেকচারে আলোচনা করা হয়েছে একতরফা দাখিলা পদ্ধতির সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা, একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হিসাব ও বইসমূহ, লাভ ক্ষতি বিবরণী ও বৈষয়িক বিবরণী প্রস্তুতকরণ। একতরফা দাখিলা পদ্ধতি হতে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে রূপান্তর।আরো আছে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন তাই আমাদের লেকচার শীটটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করুন ।।

ভূমিকা: একতরফা দাখিলা পদ্ধতি

এক তরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি প্রচলিত হিসাব ব্যবস্থা। পূর্ববর্তী ইউনিটে আমরা দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছি। দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক হিসাব পদ্ধতি। এটা বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানের জন্য উপযোগী। কেননা বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য লেনদেন সংঘটিত হয়। এক তরফা দাখিলা পদ্ধতি অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক হিসাব ব্যবস্থা। এই পদ্ধতিতে কোন নির্ধারিত নিয়ম কানুন নেই। কম মূলধন নিয়ে গড়া ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান যেখানে লেনদেনের পরিমাণ কম, যেমন- মুদি দোকান, স্টেশনারী দোকান, পান, বিড়ি, সিগারেটের দোকান, ছোট খাটো হোটেল ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলো এক তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করে।

পাঠ- ১. একতরফা দাখিলা পদ্ধতির সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা

সংজ্ঞা (Definition)

প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য- আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা জানার জন্য সংঘটিত লেনদেনেগুলিকে হিসাবভুক্ত করা। যে হিসাব পদ্ধতিতে সকল লেনদেন একটিকে ডেবিট অপরটিকে ক্রেডিট করা হয় না অর্থাৎ দুতরফা দাখিলা পদ্ধতি মোতাবেক হিসাব সংরক্ষণ করা হয় না তাকে এক তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলা হয়। এই পদ্ধতিতে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির নীতি অনুসরণ করা হয় না। ফলে বছর শেষে ব্যবসায়ের ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নিরূপণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এ পদ্ধতিতে নামিক হিসাব ও সম্পত্তিবাচক হিসাব রাখা হয় না শুধুমাত্র নগদান হিসাব ও ব্যক্তিবাচক হিসাব রাখা হয়। এটি অসম্পূর্ণ পদ্ধতি। এ ধরনের হিসাব পদ্ধতি একাধিক হিসাব পদ্ধতির মিশ্রণ মাত্র। এ পদ্ধতি সম্পর্কে হিসাববিজ্ঞানের বিভিন্ন লেখক বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। এবার আসুন আমরা তাদের কথা জেনে নেই এবং সর্বশেষ নিজেরা এর একটি সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করি।

Advertisements

অধ্যাপক আরএন কার্টার এর মতে, Single entry is a method or a variety of methods employed for recording of the transaction, which ignores the two fold aspect and consequently fails to provide the business man with the information necessary for him to be able to as certain his position.” অর্থাৎ, “এক তরফা দাখিলা পদ্ধতি লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের এক বা একাধিক পদ্ধতি যা হিসাবরক্ষণের দ্বৈত-সত্ত্বা অনুসরণ করে না। ফলে এটি ব্যবসায়ীকে তার ব্যবসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য যা তার অবস্থান নির্ণয়ে সমর্থ তা সরবরাহ করতে পারে না।

সুতরাং, পরিশেষে আমরা বলতে পারি, একতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি ত্রুটিপূর্ণ, অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক হিসাব ব্যবস্থা যেখানে বিজ্ঞানসম্মত দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি মোতাবেক লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয় না।

বৈশিষ্ট্য (Characteristics): একতরফা দাখিলা পদ্ধতি

একতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি অসম্পূর্ণ, অগোছালো ও মিশ্র হিসাব ব্যবস্থা। এ পদ্ধতির বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপঃ

১. হিসাবরক্ষণ: একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে শুধুমাত্র নগদান ও ব্যক্তিবাচক হিসাব রাখা হয়। সম্পত্তি ও নামিক হিসাবগুলো রাখা হয় না, রাখলেও আংশিক।

২. মিশ্র হিসাব পদ্ধতি: একতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি মিশ্র হিসাব পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কিছু লেনদেন উভয় পক্ষকে ডেবিট ও ক্রেডিট করা হয় আবার কোন কোন লেনদেন হিসাব রাখা হয় এবং কোন কোন লেনদেন হিসাব রাখা হয় না।

৩. লাভ-লোকসান নির্ণয়ঃ এই পদ্ধতিতে আয় ব্যয়ের পৃথক কোন হিসাব রাখা হয় না। সমাপনী মূলধন হতে প্রারম্ভিক মূলধন বিয়োগ করে লাভ লোকসান নির্ণয় করা হয়।

৪. অদৃশ্য লেনদেন হিসাব: ব্যবসায়ে অবচয় একটি অদৃশ্য লেনদেন হিসাব। এই পদ্ধতিতে অবচয় জাতীয় কোন লেনদেনের পৃথক হিসাব রাখা হয় না।

৫. আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত: এ পদ্ধতিতে কোন আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত না করে নির্দিষ্ট সময়ান্তে সম্পত্তি ও দায়ের একটি বিবরণী প্রস্তুত করা হয়ে থাকে।

৬. নীতিমালা: এ পদ্ধতিতে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির নীতি অনুসরণ না করে মালিকের নিজের সুবিধা মোতাবেক নীতিমালা অনুসরণ করা হয়।

৭. প্রয়োগ: ছোট ছোট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করা হয়।

সুবিধাসমূহ (Advantages): একতরফা দাখিলা পদ্ধতি

একতরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি অসম্পূর্ণ ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। বিভিন্ন প্রকার দুর্বলতা থাকলেও এর বিশেষ কিছু সুবিধা বিদ্যমান থাকায় এটি একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি। নিম্নে একতরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধা সমূহ উল্লেখ করা হলঃ

১. সহজ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে হিসাব রাখা খুব সহজ ও সরল। তাই এই পদ্ধতিতে সাধারণ একজন লোক খুব সহজে হিসাব সংরক্ষণ করতে পারে।

২. অল্প সংখ্যক হিসাব: এ পদ্ধতিতে সম্পত্তি সংক্রান্ত ও নামিক হিসাব রাখা হয় না বলে হিসাবরক্ষণের পরিমাণ কমে যায়।

৩. কম শ্রম ও স্বল্পসময়: হিসাবের সংখ্যা এবং কাজের পরিমাণ কমে যায় বিধায় হিসাবরক্ষণের জন্য সময় ও শ্রম কম লাগে।

৪. অল্প ব্যয়: এতে মালিক নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী হিসাব রাখতে পারে বিধায় একাধিক হিসাবরক্ষকের প্রয়োজন হয় না। ফলে ব্যয় কম হয়।

৫. গোপনীয়তা রক্ষা: মালিক নিজে হিসাব সংরক্ষণ করতে পারে বিধায় হিসাবের গোপনীয়তা রক্ষা হয়।

৬. প্রয়োগ ক্ষেত্র: ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং ছোট ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের হিসাব পদ্ধতি পরিলক্ষিত হয়।

অসুবিধাসমূহ (Disadvantages): একতরফা দাখিলা পদ্ধতি

একতরফা দাখিলা পদ্ধতির যেমন কিছু সুবিধা রয়েছে তেমনি অনেক অসুবিধাও রয়েছে। অসুবিধাসমূহ নিম্নরূপঃ

১. অসম্পূর্ণ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে লেনদেনের সম্পূর্ণ হিসাব রাখা হয় না। ফলে এটি একটি অসম্পূর্ণ পদ্ধতি।

২. গাণিতিক শুদ্ধতা: এ পদ্ধতিতে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা যায় না বিধায় হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা সম্ভব হয় না।

৩. সঠিক লাভ লোকসান নির্ণয়ে সমস্যা: এ পদ্ধতিতে নামিক হিসাবসমূহ (আয়-ব্যয় বা লাভ-লোকসান) লিপিবদ্ধ করা হয় না। তাই সঠিক লাভ লোকসান হিসাব নির্ণয় করা যায় না।

৪. প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নির্ণয়ে সমস্যা: এই পদ্ধতিতে সব সম্পত্তি ও দায়ের হিসাব রাখা হয় না বিধায় প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।

৫. ভুল ত্রুটি নিরূপনে সমস্যা: এই পদ্ধতিতে পর্যাপ্ত তথ্যের অভাব থাকার কারণে ভুল ত্রুটি ধরা পড়ে না।

৬. কারচুপি ও জালিয়াতি: এই পদ্ধতিতে হিসাবের অসম্পূর্ণতা ও ত্রুটির কারণে হিসাবের কারচুপি ও জালিয়াতি উদঘাটন করা সম্ভব হয় না।

৭. তুলনামূলক বিচার বিশে-ষণের অভাব: এটি অবৈজ্ঞানিক এবং অসম্পূর্ণ হওয়ার কারণে বিগত বছরের আয়-ব্যয়, লাভ-লোকসান, ক্রয়-বিক্রয়, দায়-দেনা ও সম্পত্তির তুলনামূলক বিচার বিশ্লেষণ করা যায় না।

৮. পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের সমস্যা: এই পদ্ধতি অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ হিসাব ব্যবস্থা বিধায় প্রয়োজনে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। ফলে ভবিষ্যতে কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয় না।

৯. ব্যয় নিয়ন্ত্রণ: এই পদ্ধতিতে নামিক হিসাব রাখা হয় না বিধায় প্রতিষ্ঠানের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

১০. প্রয়োগ ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা: কোম্পানী আইন এই পদ্ধতিকে স্বীকার করে না। আয়কর কর্তৃপক্ষ এটা গ্রহণ করে না। তাই ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেই ইহা সীমাবদ্ধ থাকে।

পাঠ- ২. একতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হিসাব ও বইসমূহ, লাভ ক্ষতি বিবরণী ও বৈষয়িক বিবরণী প্রস্তুতকরণ।

এক তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হিসাব ও বইসমূহ (Accounts and Books used in Single Entry System)

এই পদ্ধতিতে কোন কোন হিসাব ও বই সংরক্ষণ করা হয় তার কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। ব্যবসায়ী তাঁর খুশিমত হিসাব রাখেন। তবে এই পদ্ধতিতে হিসাব রাখেন এমন প্রতিষ্ঠানের সকলেই ব্যক্তিবাচক হিসাব এবং নগদ ও ব্যাংক হিসাবসমূহ সংরক্ষণ করে থাকে। প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন হিসাব ও বই সংরক্ষণ করে থাকে। তবে সাধারণত নিচের হিসাব ও বইগুলো এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।

১। হিসাবসমূহ

(ক) পাওনাদার হিসাব, (খ) দেনাদার হিসাব, (গ) নগদ ও ব্যাংক হিসাব

২। অন্যান্য বইসমূহ

(ক) ক্রয় বই, (খ) বিক্রয় বই, (গ) ক্রয় ফেরত বই, (ঘ) বিক্রয় ফেরত বই, (ঙ) প্রাপ্য বিল বই, (চ) প্রদেয় বিল বই

উপরের বইগুলো অবশ্য ব্যবসায়ের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে। এই পদ্ধতিতে যদিও জাবেদা রাখা হয় না তথাপি নগদান হিসাব এর বিকল্প হিসাবে কাজ করে। এছাড়া ধারে সংঘটিত লেনদেনগুলো ক্রয় ও বিক্রয় বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়।

লাভ-লোকসান বিবরণী (Statement of Profit and Loss)

এক তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে কোন নামিক হিসাব রাখা হয় না। অথচ লাভ লোকসান নির্ণয়ের মূল ভিত্তি হল নামিক হিসাব। ব্যবসায়ের লাভ-লোকসান কত হল তা একটি নির্দিষ্ট সময়ে জানা প্রয়োজন। এই পদ্ধতিতে ক্রয় ও বিক্রয় এবং লাভ-লোকসান হিসাব তৈরি করা যায় না। এ পদ্ধতিতে একটি লাভ-লোকসান বিবরণী তৈরি করে লাভ-ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যায়। বছরের শেষ তারিখের মূলধনের সাথে বছরের প্রথম তারিখের মূলধনের পার্থক্যকে লাভ বা ক্ষতি বলা হয়।

সমাপনী মূলধন প্রারম্ভিক মূলধনের চেয়ে বেশি হলে নিট লাভ হয় আর সমাপনী মূলধন প্রারম্ভিক মূলধনের চেয়ে কম হলে নিট ক্ষতি হয়।

লাভ-ক্ষতি নির্ণয়ের সময় সমাপনী মূলধনের সাথে উত্তোলন যোগ করতে হবে এবং প্রারম্ভিক মূলধনের সাথে অতিরিক্ত মূলধন যোগ করতে হবে।

আরো পড়ুন :

নিট মুনাফা ও নিট ক্ষতি নিম্নে সূত্রের সাহায্যে নির্ণয় করা যায়। যথাঃ

নিট লাভ = {(সমাপনী মূলধন উত্তোলন) (প্রারম্ভিক মূলধন অতিরিক্ত মূলধন)}

নিট ক্ষতি = ((প্রারম্ভিক মূলধন অতিরিক্ত মূলধন) (সমাপনী মূলধন + উত্তোলন)

বৈষয়িক বিবরণী (Statement of Affairs)

এক তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তি ও দায়-দেনা জানার জন্য যে বিবরণী প্রস্তুত করা হয় তাকে বৈষয়িক বিবরণী বলে। এ পদ্ধতিতে বৈষয়িক বিবরণী বিশেষভাবে প্রযোজ্য। লাভ-ক্ষতি বিবৃতি ও বিষয় বিবরণী প্রস্তুত করার জন্য যে বিষয়গুলো জানা দরকার সেগুলো নিয়ে আসুন আলোচনা করি।

কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: একতরফা দাখিলা পদ্ধতি

১) সমাপনী মূলধন নির্ণয়ের সময় যদি কোন স্থায়ী সম্পত্তির প্রারম্ভিক মূল্য থাকে কিন্তু সমাপনী মূল্য না দেয়া থাকে এবং সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির বিক্রয় করা হয়েছে কিনা তা উল্লেখ করা না থাকলে, প্রারম্ভিক মূল্য যা সমাপনী মূল্যও তাই ধরতে হবে। একই ভাবে দীর্ঘ মেয়াদী দায় যেমন ব্যাংক ঋণ বা বন্ধকী ঋণ এর প্রারম্ভিক মূল্য আছে কিন্তু সমাপনী মূল্য উলে-খ নাই এবং ঋণ পরিশোধের কোন তথ্য না থাকে তাহলে প্রারম্ভিক ঋণের পরিমাণকে সমাপনী পরিমাণ ধরা যাবে। স্থায়ী সম্পত্তি যেমন, আসবাবপত্র, দালানকোঠা, কলকজা ইত্যাদি।

২) যদি চলতি বছরে কোন সম্পত্তি ক্রয় করা হয় এবং প্রারম্ভিকে ঐ সম্পত্তি থাকে তখন প্রারম্ভিক সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি ও ক্রয়কৃত সম্পত্তির মূল্য যোগ করে সমাপনীতে বসাতে হবে। আর যখন ক্রয়কৃত সম্পত্তির মত প্রারম্ভিক ঐ সম্পত্তি না থাকে তখন ঐ সম্পত্তির মূল্যই সরাসরি সমাপনীতে বসাতে হবে।

৩) বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রারম্ভিক মূল্য আছে কিন্তু সমাপনী মূল্য না থাকলে এবং বিনিয়োগ ভাঙ্গানো হয়েছে কিনা তা উল্লেখ করা না থাকলে বিনিয়োগের প্রারম্ভিক মূল্যই সমাপনীতে বসবে।

আপনাকে লাভ ক্ষতি বিবৃতি প্রস্তুত করার সময় নিচের বিষয়গুলো মনে রাখতে হবেঃ

১. মূলধন নিরূপণ করার পর লাভ-ক্ষতি বিবৃতি প্রস্তুত করার সময় সমাপনী মূলধনকে ক্রেডিট পার্শ্বে এবং প্রারম্ভিক মূলধনকে ডেবিট পার্শ্বে দেখাতে হবে।

২. মালিকের নগদ ও পণ্য উত্তোলন সমাপনী মূলধনের সাথে যোগ করে দেখাতে হবে।

৩. ব্যবসায়ে ব্যক্তিগত টাকা কারবারে আনয়ন করলে প্রারম্ভিক মূলধনের সাথে যোগ করে দেখাতে হবে।

৪. সম্পদের অবচয়, কু-ঋণ সঞ্চিতি ও বাট্টা সঞ্চিতি মূলধনের সুদ বাম পাশে এবং উত্তোলনের সুদ ডান পাশে বসাতে হবে।

৫. সম্পদের অবচয় প্রারম্ভিক সম্পত্তির উপর ধরতে হবে। কোন নতুন সম্পত্তি ক্রয় করলে এবং তারিখ উল্লেখ থাকলে তারিখ অনুসারে সুদ ধরতে হবে। আর তারিখ উল্লেখ না থাকলে ছয় মাসের সুদ ধরতে হয়।

৬. দেনাদার ও প্রাপ্য বিলের উপর কু-ঋণ ও বাট্টা সঞ্চিতি সমাপনী মূল্যের উপর বের করতে হয়।

৭. পাওনাদারের বাট্টা সঞ্চিতি সমাপ্তি পাওনাদারের উপর ধরতে হবে।

৮. অতিরিক্ত মূলধনের উপর সুদের তারিখ উল্লেখ থাকলে তারিখ অনুসারে আর তারিখ উলেখ না থাকলে অতিরিক্ত মূলধনের উপর সুদ ধরার প্রয়োজন নেই।

৯. বকেয়া খরচ লাভ-ক্ষতি বিবৃতির বাম পাশে এবং অগ্রিম খরচ ডান পাশে বসাতে হবে এবং বিষয় বিবরণীতে হিসাব ভুক্ত করতে হবে।

পাঠ- ৪. স্থায়ী সম্পদ, বিনিয়োগ, চলতি সম্পদ, দীর্ঘ মেয়াদী ও চলতি দায়ের পরিচিতি

স্থায়ী সম্পদ (Fixed Asset)

যে সকল সম্পদ একবার ক্রয় করে বহুদিন ধরে মুনাফা অর্জন করা যায় বা মুনাফা ভোগ করা যায় তাকে স্থায়ী সম্পদ বলে। স্থায়ী সম্পদ ব্যবসায়ে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহৃত হয়। এ সকল সম্পদ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয় না বরং ব্যবসায়ে ব্যবহারের জন্য ক্রয় করা হয়। যেমন- জমি, দালানকোঠা, কলকব্জা, আসবাবপত্র, ট্রেডমার্ক, সুনাম ইত্যাদি।

বিনিয়োগ (Investment)

অতিরিক্ত আয় করার উদ্দেশ্যে যে অর্থ কাজে লাগানো হয় তাকে বিনিয়োগ বলে। বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার এবং ঋণপত্র ক্রয় অথবা অন্য কোন লাভজনক খাতে অতিরিক্ত আয় করার জন্য বিনিয়োগ করে থাকে। এই বিনিয়োগ এক বছর কিংবা তার কম সময় হলে তাকে স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগ বলে। পক্ষান্তরে, এক বছরের অধিক সময়ের জন্য যে অর্থ বিনিয়োগ করা হয় তাকে দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ বলে। স্বল্প মেয়াদী বিনিয়োগ চলতি সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।

চলতি সম্পদ (Current Assets)

যে সম্পদ যত তাড়াতাড়ি নগদ অর্থে পরিণত করা যায় তাকে চলতি সম্পদ বলে। এ সম্পদ বিক্রয়ের জন্য উৎপাদন ও সংগ্রহ করা হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, সম্পদের সুবিধা এক বছরের মত ভোগ করা যায় বা এক বছরের মধ্যে নগদ অর্থে পরিণত করা যায় তাকে চলতি সম্পদ বলে। চলতি সম্পদ সর্বদাই পরিবর্তনশীল। যেমন- বিবিধ দেনাদার বা প্রাপ্য হিসাব, প্রাপ্য বিল, মজুদ পণ্য, হাতে নগদ, ব্যাংক জমা, অগ্রিম খরচ, প্রাপ্য হিসাব ইত্যাদি।

দীর্ঘ মেয়াদী দায় (Long-term Liabilities)

যে দায় এক বছরের অধিক সময় ধরে পরিশোধ করা যায় তাকে দীর্ঘমেয়াদী দায় বলে। দীর্ঘ মেয়াদী দায় সাধারণ ১০ বছর বা ২০ বছর বা তারও অধিক সময় ধরে পরিশোধ করা যায়। যেমন- ব্যাংক ঋণ, হাউজ বিল্ডিং ঋণ, বন্ধকী ঋণ। এর মেয়াদ দীর্ঘ সময়।

চলতি দায় (Current Liabilities)

যে দায় এক বছর বা তার কম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয় তাকে চলতি দায় বলে। এই সকল দায় খুব কম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়। এর মেয়াদ স্বল্প সময়। যেমন- বিবিধ পাওনাদার, ব্যাংক জমাতিরিক্ত, প্রদেয় বিল, প্রদেয় হিসাব, বকেয়া খরচ, আয়কর, সঞ্চিতি, প্রস্তাবিত লভ্যাংশ, অগ্রিম আয় ইত্যাদি।

পাঠ- ৫. একতরফা দাখিলা পদ্ধতি হতে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে রূপান্তর

এক তরফা দাখিলা পদ্ধতি হতে কিভাবে দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে রূপান্তর করা যায় তার পদক্ষেপ নিম্নরূপ

১. প্রথমে প্রারম্ভিক মূলধন যেমন প্রারম্ভিক সম্পদ ও প্রারম্ভিক দায়ের একটি বিবরণী তৈরি করতে হবে। পূর্ব পাঠ-এ প্রারম্ভিক মূলধন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। প্রারম্ভিক বিষয় বিবরণীতে উল্লেখিত সম্পত্তি দায় নিয়ে প্রারম্ভিক জাবেদায় লিপিবদ্ধ করতে হবে। সকল প্রারম্ভিক সম্পত্তিকে ডেবিট এবং সকল প্রারম্ভিক দায় ও মূলধনকে ক্রেডিট করতে হবে।

২. নগদ, পাওনাদারবৃন্দ ও দেনাদারবৃন্দ ব্যতীত অন্যান্য সকল সম্পত্তি, দায় গুলো জাবেদা হতে নিজ নিজ খতিয়ানে স্থানান্তর করতে হবে। এ পদ্ধতিতে নগদ, পাওনাদার ও দেনাদার হিসাব পূর্বেই খতিয়ানে লিপিবদ্ধ থাকে বিধায় এদের জন্য নতুন করে হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার কোন প্রয়োজন নেই।

৩. নগদান বইতে ব্যক্তির হিসাব সংক্রান্ত দেনা-পাওনা ব্যতীত সম্পত্তি ও নামিক হিসাব সংক্রান্ত লেনদেনসমূহ খতিয়ানে স্থানান্তর করতে হবে। যদি তিনঘরা নগদান বই হয় তাহলে বাট্টার কলামের মোট অংক সংশ্লিষ্ট খতিয়ান হিসাবে মোট প্রাপ্ত বাট্টা ও মোট প্রদত্ত বাট্টা সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

৪. ব্যক্তিক হিসাবের বিভিন্ন লেনদেন বিশ্লেষণ করে ধারে ক্রয়, ধারে বিক্রয়, প্রাপ্য বিল ও প্রদেয় বিল ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট খতিয়ান হিসাবে সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।

৫. ব্যবসায়ের লেনদেনগুলো দুতরফা দাখিলাভুক্ত করার পর যদি অন্যান্য কোন বিষয় যেমন- বকেয়া খরচ, অগ্রিম খরচ, প্রাপ্য আয়, অগ্রিম প্রাপ্ত আয়, মালিক কর্তৃক পণ্য উত্তোলন ইত্যাদি বিষয়গুলো সমন্বয় না হলে তা জাবেদার মাধ্যমে সমন্বয় করে খতিয়ানে বসাতে হবে। উপর্যুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার পর এক তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে রক্ষিত হিসাব সম্পূর্ণ দুতরফা দাখিলা পদ্ধতিতে রূপান্তর করা যাবে যা হতে একটি রেওয়ামিল প্রস্তুত করা যাবে এবং রেওয়ামিল হতে বিশদ আয় বিবরণী ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয় করা যবে।

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র একতরফা দাখিলা পদ্ধতি নোট PDF Download

Facebook
X
LinkedIn
Telegram
Print

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Stay Connected

Subscribe our Newsletter

Scroll to Top