Advertisements
এইচএসসি জীববিজ্ঞান অণুজীব এই অধ্যায়ে মূলত বিভিন্ন ধরনের অণুজীব, তাদের বৈশিষ্ট্য, গঠন, জীবনচক্র, এবং মানুষের জীবনে তাদের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখানে অণুজীব বলতে প্রধানত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, প্রোটোজোয়া, এবং ফাংগাস বোঝানো হয়। চলুন অধ্যায়ের প্রধান বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে দেখি:
জীববিজ্ঞান অণুজীব কন্টেন্ট টেবিল
১. অণুজীবের সংজ্ঞা এবং প্রকারভেদ:
অণুজীব: এককোষী বা বহুকোষী ক্ষুদ্র জীব, যা সরাসরি খালি চোখে দেখা সম্ভব নয় এবং মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখা যায়।
- প্রধান প্রকারভেদ:
- ব্যাকটেরিয়া
- ভাইরাস
- প্রোটোজোয়া
- ফাংগাস
২. ব্যাকটেরিয়া:
- সংজ্ঞা:
ব্যাকটেরিয়া হলো এককোষী প্রোক্যারিওটিক অণুজীব।
- গঠন:
- সেল ওয়াল: ব্যাকটেরিয়ার সেল ওয়াল পেপটিডোগ্লাইকান দিয়ে গঠিত, যা কোষের আকৃতি এবং সুরক্ষা প্রদান করে।
- সাইটোপ্লাজম: এতে জেলি-সদৃশ পদার্থ থাকে যেখানে কোষের বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক ক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
- নিউক্লিওয়েড: এটি ডিএনএ এর একটি অংশ যেখানে ব্যাকটেরিয়ার জিনগত তথ্য থাকে।
- প্লাজমিড: অতিরিক্ত ডিএনএ যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী।
- প্রজনন:
- দ্বিবিভাজন (Binary Fission): ব্যাকটেরিয়া নিজেদের কোষ বিভাজনের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে, যা দ্রুত ঘটে।
- ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ:
- কলেরা (Cholera): Vibrio cholerae ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়ে ডায়রিয়া ও ডিহাইড্রেশনের কারণ হয়।
- টিউবারকুলোসিস (Tuberculosis): Mycobacterium tuberculosis ব্যাকটেরিয়া ফুসফুসে আক্রমণ করে।
৩. ভাইরাস:
- সংজ্ঞা:
ভাইরাস হলো অতিক্ষুদ্র অণুজীব যা শুধুমাত্র জীবন্ত কোষের ভিতরে প্রবেশ করলে প্রজনন করতে সক্ষম।
Advertisements
- গঠন:
- ক্যাপসিড (Capsid): প্রোটিনের কোট যা ভাইরাসের জিনগত পদার্থকে সুরক্ষা দেয়।
- জিনোম: ডিএনএ বা আরএনএ যা ভাইরাসের জিনগত তথ্য বহন করে।
- এনভেলপ: কিছু ভাইরাসের চারপাশে থাকা লিপিডের স্তর যা হোস্ট কোষের সাথে মিশে ভাইরাস প্রবেশে সহায়তা করে।
- প্রজনন:
- লাইটিক সাইকেল: ভাইরাস হোস্ট কোষে প্রবেশ করে দ্রুত নতুন ভাইরাস উৎপাদন করে এবং শেষে হোস্ট কোষটি ধ্বংস করে।
- লাইসোজেনিক সাইকেল: ভাইরাস হোস্টের জিনোমের সাথে মিশে যায় এবং সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়, পরে সক্রিয় হয়ে নতুন ভাইরাস উৎপাদন করে।
- ভাইরাসজনিত রোগ:
- ইনফ্লুয়েঞ্জা: ফ্লু ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট রোগ যা শ্বাসতন্ত্রে আক্রমণ করে।
- এইচআইভি/এইডস: মানবদেহের ইমিউন সিস্টেমে আক্রমণ করে।
৪. প্রোটোজোয়া:
- সংজ্ঞা:
প্রোটোজোয়া হলো এককোষী ইউক্যারিওটিক অণুজীব।
- গঠন:
- নিউক্লিয়াস: একটি সেন্ট্রাল নিউক্লিয়াস থাকে যা কোষের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
- সিলিয়া/ফ্লাজেলা: প্রোটোজোয়ার চলাচলের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- কন্ট্রাকটাইল ভ্যাকুওল: কোষের পানি সমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
- প্রজনন:
- অযৌন প্রজনন: দ্বিবিভাজন, বাডিং বা স্পোরুলেশন দ্বারা বংশবৃদ্ধি করে।
- যৌন প্রজনন: কনজুগেশন বা গ্যামেটের সংমিশ্রণের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে।
- প্রোটোজোয়াজনিত রোগ:
- ম্যালেরিয়া: প্লাসমোডিয়াম প্রজাতির প্রোটোজোয়া দ্বারা সৃষ্ট, যা মশার মাধ্যমে ছড়ায়।
- অ্যামিবিক ডাইসেন্ট্রি: Entamoeba histolytica দ্বারা সৃষ্ট, যা অন্ত্রের প্রদাহ ঘটায়।
আরো পড়ুন :
৫. ফাংগাস:
- সংজ্ঞা:
ফাংগাস হলো এককোষী বা বহুকোষী ইউক্যারিওটিক অণুজীব।
- গঠন:
- হাইফা: ফাংগাসের প্রধান গঠন একক যা মাইসেলিয়াম তৈরি করে।
- মাইসেলিয়াম: হাইফার জাল যা খাদ্য শোষণ এবং পুষ্টি সংরক্ষণে সহায়তা করে।
- স্পোরাঞ্জিয়া: স্পোর উৎপাদনকারী অংশ যা বংশবৃদ্ধির জন্য দায়ী।
- প্রজনন:
- অযৌন প্রজনন: স্পোর দ্বারা বংশবৃদ্ধি করে।
- যৌন প্রজনন: বিভিন্ন ফাংগাস প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্য ঘটানোর জন্য যৌন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে।
- ফাংগাসজনিত রোগ:
- ক্যান্ডিডিয়াসিস: Candida প্রজাতির ফাংগাস দ্বারা সৃষ্ট যা সাধারণত মানুষের ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেনে সংক্রমণ করে।
- অ্যাথলেটস ফুট: Trichophyton ফাংগাস দ্বারা সৃষ্ট যা পায়ের ত্বকে আক্রমণ করে।
৬. অণুজীবের ভূমিকা:
- মানব জীবনে ভূমিকা:
- ইতিবাচক ভূমিকা: খাদ্য প্রস্তুতিতে (যেমনঃ দই, পনির), ওষুধ প্রস্তুতিতে (যেমনঃ অ্যান্টিবায়োটিক), জৈব সার উৎপাদনে।
- নেতিবাচক ভূমিকা: বিভিন্ন রোগের কারণ, খাদ্যপচন, পোকামাকড়ের সংক্রমণ।
৭. অণুজীবের সঙ্গে সম্পর্কিত রোগ:
- ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ: যক্ষ্মা (Tuberculosis), টাইটানাস (Tetanus)।
- ভাইরাসজনিত রোগ: এইচআইভি/এইডস, ক্যান্সার।
- প্রোটোজোয়াজনিত রোগ: ম্যালেরিয়া (Malaria), আমিবিক ডাইসেন্ট্রি।
- ফাংগাসজনিত রোগ: ক্যানডিডিয়াসিস (Candidiasis), রিংওয়ার্ম (Ringworm)।
এইচএসসি জীববিজ্ঞান অণুজীব সম্পর্কে আরো গুরুত্বপূর্ণ টপিক পড়তে আমাদের লেকচার শীটটি ডাউনলোড করুন :