হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি নোট/গাইড PDF Download

Advertisements

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্রের ১ম অধ্যায় হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকে প্রতিবছর বহুনির্বাচনি প্রশ্ন থাকে। এই লেকচারে আলোচনা করা হয়েছে হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি: হিসাববিজ্ঞানের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ, ব্যবসায়ের ভাষা হিসাবে হিসাববিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, হিসাববিজ্ঞানের তথ্য ব্যবহারকারী, ঘটনা ও লেনদেনের ধারণা, হিসাব সমীকরণ ও হিসাব সমীকরণে লেনদেনের প্রভাব, ব্যবসায়িক লেনদেনকে চিহ্নিত করার পদ্ধতি এবং ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ, হিসাব ও হিসাবের শ্রেণীবিভাগ। আরো আছে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন তাই আমাদের হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি লেকচার শীটটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করুন ।।

ভূমিকা: হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ তাই সহজে সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে পারে। অর্থাৎ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করার ফলে তাদের মধ্যে সেবার আদান প্রদান শুরু হয়। তাই সেবা যখন অর্থের মাধ্যমে আদান প্রদান হতে থাকে তখন এই হিসাব নিকাশের প্রয়োজন হয়। এজন্য বলা হয়, হিসাববিজ্ঞানের ইতিহাস মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতোই পুরাতন। মানুষের জীবন যত বৈচিত্রময় হয়ে উঠেছে, তেমনি হিসাববিজ্ঞানের প্রয়োজনও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। মানুষের জীবনে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক ঘটনা ঘটতে পারে, সেগুলোকে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সংরক্ষণ না করা হলে, সঠিক ফলাফল বুঝতে পারা যায় না। এখানে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে কিছু আর্থিক ঘটনা এবং কিছু অনার্থিক ঘটনা। যে সকল আর্থিক ঘটনাগুলোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে সেগুলোর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় বেশী। কারণ, আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে এমন ঘটনাকে লেনদেন বলা হয়। হিসাববিজ্ঞানের প্রধান কাজ হলো এই লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধ করা এবং নির্দিষ্ট সময় শেষে ফলাফল নির্ণয় করা। সুতরাং হিসাববিজ্ঞান হচ্ছে, এমন একটি বাস্তব বিষয়, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিধিবদ্ধ ও নিয়ম অনুসারে আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করে এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং আগ্রহী পক্ষসমূহের নিকট তথ্য প্রকাশ করে। তাই আমরা বলি, বর্তমানে হিসাববিজ্ঞানের কার্যক্রম ও এর পরিধি দিনে দিনে বাস্তবভিত্তিক, আধুনিকভাবে প্রয়োগ এবং উন্নতি উত্তর উত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পাঠ-১. হিসাববিজ্ঞানের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য

হিসাববিজ্ঞান কাকে বলে ?

সান্দিয়ারা গ্রামের জনাব জাকির হোসেন এর একটি মুদির দোকান আছে। দোকানটির নাম মিরাজ স্টোর। প্রতিষ্ঠানের মালিক যখন উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য দুই মণ ময়দা ক্রয় করেন তখন মিরাজ স্টোরের দুই মণ এর মূল্য হিসাবে কিছু নগদ টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে হ্রাস পায়, অপর পক্ষে দুই মণ ময়দা প্রতিষ্ঠানে সম্পত্তির ন্যায় বৃদ্ধি পায়। একটি কারবার প্রতিষ্ঠানে এমন অসংখ্য লেনদেন সংগঠিত হয়। এ সকল লেনদেনগুলো সুন্দর ও সুশৃংখলভাবে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধকরন, শ্রেণীবদ্ধ করার মাধ্যমে আর্থিক ফলাফল নির্ণয়, আর্থিক অবস্থা নিরুপন এবং এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সেগুলো উহার ব্যবহারকারীদের কাছে পৌছে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে হিসাববিজ্ঞান বলে।

এ বিয়য়ে বিভিন্ন মনীষীগণ বিভিন্ন মতামত প্রদান করেন-

Advertisements

এ. ডব্লিউ জনসন এর মতে, “টাকায় পরিমাপযোগ্য কারবারী লেনদেন সংগ্রহ, সংকলন, সুসংঘবদ্ধভাবে লিপিবদ্ধকরণ, আর্থিক ফলাফল তৈরি করণ, সেগুলো বিশ্লেষণ ও বিশদ ব্যাখ্যাকরণকে হিসাববিজ্ঞান বলে।”

American Accounting Association এর মতে, “যে পদ্ধতি অর্থনৈতিক তথ্য নির্ণয়, পরিমাপ ও সরবরাহ করে, এর ব্যবহারকারীদের বিচার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে তাকে হিসাববিজ্ঞান বলে”।

Weygandt, Kimmel and Kieso এর মতে, “প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক ঘটনাসমূহ শনাক্তকরণ, লিপিবদ্ধকরণ এবং আগ্রহী ব্যবহারকারীর নিকট সরবরাহ করার প্রক্রিয়াই হচ্ছে হিসাববিজ্ঞান।”

হিসাববিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য

উপরের আলোচনা থেকে হিসাববিজ্ঞানের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো পরিলক্ষিত হয় –

ক) প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন সংগ্রহ করা।

খ) সংরক্ষিত লেনদেনগুলো সুশৃংখলভাবে হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়।

গ) আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করার জন্য তথ্যগুলো শ্রেণীবদ্ধ করা হয়।

ঘ) নির্দিষ্ট সময় শেষে আর্থিক ফলাফল নির্ণয় ও আর্থিক অবস্থা নিরুপণ করা হয়।

ঙ) তথ্যগুলোর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা হয়।

সারসংক্ষেপ

পরিশেষে আমরা বলতে পারি, হিসাববিজ্ঞান হলো এমন একটি তথ্য ব্যবস্থা প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ায় কারবারে লেনদেন সংরক্ষণ, লিপিবদ্ধকরণ শ্রেনীবিন্যাসকরণ, আর্থিক ফলাফল ও আর্থিক অবস্থা নির্ণয় এবং এগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিবেদন তৈরি করে উহার ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছানো।

পাঠ-২. হিসাববিজ্ঞানের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ

মানব সভ্যতার ইতিহাসের মতোই হিসাববিজ্ঞানের ইতিহাস অনেক প্রাচীন ও বৈচিত্র্যময়। সভ্যতার পরিবর্তনের ধারায় ব্যবসায় বাণিজ্যের প্রয়োজনে হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থা আস্তে আস্তে পরিবর্তন হয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। হিসাববিজ্ঞানের ক্রমবিকাশের ইতিহাসকে কয়েকটি যুগে ভাগ করা যায়।

১। প্রস্তর যুগ

এ যুগে মানুষ পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত। গাছের ফলমুল সংগ্রহ করে ও পাখি শিকার করে এবং তা খেয়ে বেঁচে থাকত। পশু শিকার করাই ছিলো তাদের প্রধান পেশা। এই পশু শিকারের সংখ্যা গননা করার জন্য পাথরের গায়ে দাগ কেটে হিসাব রাখতো। অনুমান করা হয় যে, তাদের এ সংখ্যা গণনার ধারণা থেকে হিসাববিজ্ঞানের পথচলা শুরু।

২। প্রাচীন যুগ

এ যুগে মানুষ পাহাড়ের গুহা হতে বেরিয়ে সামাজিকভাবে জীবনযাপন করতে শুরু করেন। এ সময় তারা কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহের প্রধান পেশা হিসাবে বেছে নেয়। তাদের কাজের হিসাব রাখার জন্য ঘরের দেওয়ালে, বাঁশের গায়ে দাগ কেটে ফসলের হিসাব রাখতো। আমাদের দেশে প্রত্যন্ত গ্রামে এখনও এ ভাবে শস্যের হিসাব রাখতে দেখা যায়।

৩। বিনিময় যুগ

যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানষের চাহিদার পরিবর্তন হতে থাকে। এই চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই চাহিদা পূরণের জন্য মানুষ পণ্যের বিনিময়ে পণ্য আদান প্রদান করতে থাকে এবং চূড়ান্ত বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পত্তির লেনদেনের হিসাব রাখতে শুরু করে। তখন এ সকল লেনদেন হিসাব রাখার পদ্ধতিগুলো ছিলো অদ্ভুত। যেমন পেরু দেশে কিপু নামের রঙ্গিন সুতা ব্যবহার করত। চীন দেশে এব্যাকাস নামক এক প্রকার হিসাব যন্ত্র ব্যবহার করতো। আবার, রানী এলিজাবেথের রাজত্ব কালের আগ পর্যন্ত এক ধরনের চ্যাপ্টা কাঠি (Tally) ব্যবহার করতো। এছাড়াও গাছের পাতায় আঁচড় দিয়ে, বাঁশের গায়ে দাগ কেটে, কাঠের গায়ে ছিদ্র করে ইত্যাদি ভাবে হিসাব রাখতো। তখনও সমাজে মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়নি।

৪। মুদ্রা যুগ

বিনিময় প্রথার অসুবিধাজনিত কারণে মুদ্রাযুগ এর প্রচলন শুরু হয়। এখানে অর্থের বিনিময়ে পণ্যের মূল্য নিরূপণ করা হয়। অর্থের বা মুদ্রার প্রচলন শুরু হলে ব্যবসায় জগতে ব্যাপক প্রসার ঘটে। এ সময় পেশাগত ব্যবসায়ী শ্রেণি ধারে পণ্য ক্রয়- বিক্রয় শুরু করে এবং লিখিতভাবে হিসাব রাখা শুরু করে। ফলে হিসাব রক্ষার পদ্ধতি আরো উন্নত হয় কিন্তু তখনও কোন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উদ্ভব হয়নি।

৫। মধ্য যুগ

বিনিময়ের মাধ্যমে অর্থের প্রচলনে হিসাবরক্ষণে ব্যাপক উন্নতি হয়। সভ্যতার ক্রমাগত পরিবর্তনে ব্যবসায় বাণিজ্যে এর বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে। পঞ্চাদশ শতাব্দীতে ইতালীয় ধর্ম যাজক এবং গণিতবিদ লুকাপ্যাসিওলি ১৪৯৪ সালে “সুমা ডি এরিথমেটিকা জিওমেট্রিয়া, প্রপোর্শন এট প্রোপরশনলিটা” নামক গ্রন্থে দুইতরফা দাখিলা পদ্ধতির সুত্র বর্ণনা করেন। হিসাব রক্ষণের এই নীতিটি সকল ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রচলন শুরু হয়।

৬। আধুনিক যুগ

লুকা প্যাসিওলি এর সময় থেকে আজ পর্যন্ত মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। উৎপাদন ব্যবস্থা ও ব্যবসায়ের উন্নয়নের সাথে সাথে হিসাবরক্ষণ ব্যবস্থারও যথেষ্ঠ পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে হিসাববিজ্ঞানে বিভিন্ন কৌশল ও প্রযুক্তিকরণ করার ফলে নতুন করে বেরিয়ে এসেছে ব্যবস্থাপনা হিসাববিজ্ঞান, বাজেটিয় হিসাববিজ্ঞান, মানব সম্পদ হিসাববিজ্ঞান, সামাজিক হিসাববিজ্ঞান ইত্যাদি। এ যুগকে মুলত হিসাবরক্ষণের কম্পিউটার যুগ বলে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হিসাবরক্ষণের মধ্যে সমতা আনার জন্য (Accounting Standard Committee) নামে একটি সংস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ এই সংস্থার একটি সদস্য।

পাঠ-৩. ব্যবসায়ের ভাষা হিসাবে হিসাববিজ্ঞান

ভাষা মানুষের মনের ভাব প্রকাশের প্রধান মাধ্যম। প্রত্যেক মানুষ তার মনের চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি ইচ্ছা ভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করে। তেমনিভাবে হিসাববিজ্ঞান কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল তৈরী এবং আর্থিক অবস্থা উপস্থাপন করার জন্য হিসাব প্রক্রিয়ার সাহায্য নিয়ে থাকে। আধুনিক হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলা হয়। কারণ, কারবার প্রতিষ্ঠানের যে কোন ধরণের তথ্য হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত সকল পক্ষ সমূহ অর্থাৎ দেনাদার, পাওনাদার, বিনিয়োগকারী, ঋণদাতা, গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সহজেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যে কোন তথ্য পেয়ে থাকে।

RF Meigs, W B Meigs & M A Meigs তাঁদের Financial Accounting গ্রন্থে বলেছেন-

“Accounting is the language of business. It is the way of business people set good measure result and evaluate performance”- অর্থাৎ “হিসাববিজ্ঞান ব্যবসায়ের ভাষা। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা লক্ষ্য স্থির করে, ফলাফল পরিমাপ করে এবং ফলাফল মূল্যায়ন করে।”

যে সকল কারণে হিসাববিজ্ঞানকে ব্যবসায়ের ভাষা বলে মনে করা হয়, তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো-

(ক) আর্থিক ফলাফল নির্ণয়

প্রতিষ্ঠানের সংগঠিত লেনদেনগুলো হিসাববিজ্ঞানের নিয়ম নীতি ও প্রথা অনুযায়ী বিজ্ঞানসম্মতভাবে সুবিন্যাস্ত করে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। লিপিবদ্ধকৃত উপাত্ত সমূহকে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা হয়। আর্থিক ফলাফলের প্রতিবেদন হতে নিম্নলিখিত তথ্য সমূহ পাওয়া যায়।

i) মোট লাভ বা ক্ষতি

ii) নীট লাভ বা ক্ষতি,

iii) প্রতিষ্ঠানের উপার্জন ক্ষমতা,

iv) ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দক্ষতা

(খ) আর্থিক অবস্থা প্রকাশ

প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনগুলো বিজ্ঞানসম্মতভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় বলে, হিসাবকাল শেষে প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ও দায় গুলো নিয়ে একটি উদ্বৃত্ত পত্র তৈরী করা হয়। যার ফলে প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক পক্ষ সমূহকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সরবরাহ করা হয়। নিম্নে তথ্যগুলো উল্লেখ করা হলো-

i) প্রতিষ্ঠানের চলতি সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ,

ii) প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পদ ও দায়ের পরিমাণ,

iii) বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ,

iv) প্রতিষ্ঠানের মূলধন ও ঋণ এর পরিমাণ।

(গ) নগদ প্রবাহ

একটি নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে কি পরিমাণ নগদ প্রদান এবং কি পরিমাণ নগদ প্রাপ্তি হয়েছে তা জানা যায়।

(ঘ) ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে তথ্য প্রদান

প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা সংক্রান্ত বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে আর্থিক প্রতিবেদন ছাড়াও বিভিন্ন রকমের তথ্য প্রয়োজন হয়। যেমন তারল্য অনুপাত, দক্ষতা অনুপাত, উপার্জন ক্ষমতা হার, মজুদ ব্যবস্থাপনা এবং মূল্য নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য প্রদান করে থাকে।

সারসংক্ষেপ

উপরের আলোচনা হতে আমরা বলতে পারি, হিসাববিজ্ঞান হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভাষা। কারণ হিসাববিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল নির্ণয়, আর্থিক অবস্থা নিরূপণ, নগদ প্রবাহ এবং ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন ধরনের তথ্য প্রদান করে সাহায্য করে থাকে।

পাঠ-৪. হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য

যে কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করে উক্ত দেশের ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের উপর। আর এ বিষয়টি হিসাববিজ্ঞানের মূলবিষয়বস্তু। হিসাববিজ্ঞানের মুখ্য উদ্দেশ্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হল –

১। স্থায়ীভাবে হিসাব সংরক্ষন করা: হিসাববিজ্ঞানের অন্যতম উদ্দেশ্য হল আর্থিক লেনদেনগুলো নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে স্থায়ী ভাবে হিসাবের খাতায় সংরক্ষণ করা। ফলে ভবিষ্যতে যে কোন সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা যায়।

২। আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা: একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে ক্রয়-বিক্রয় ও লাভ-লোকসান হিসাবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ফলাফল নির্ণয় করা হয়।

৩। আর্থিক অবস্থা নিরুপণ করা: হিসাবকাল শেষে প্রতিষ্ঠানের কি পরিমান দায় ও সম্পত্তি রয়েছে তা উদ্বৃত্তপত্রের মাধ্যমে জানতে সহায়তা করা হিসাববিজ্ঞানের উদ্দেশ্য।

৪। নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা: ভবিষ্যতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ এর জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য দরকার হয়। যাহা হিসাববিজ্ঞানের আয় বিবরণী আর্থিক অবস্থা নিরূপণের মাধ্যমে ও প্রতিবেদন তৈরীর মাধ্যমে ব্যবস্থাপককে সঠিক তথ্য সরবরাহ করে প্রতিষ্ঠানকে সহযোগিতা করে।

এ ছাড়া আরও উদ্দেশ্য রয়েছে –

ক) গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা,

খ) ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা,

গ) জালিয়াতি রোধ করা,

ঘ) কর নির্ধারণে সহায়তা করা

ঙ) মুল্যবোধ ও জবাবদিহিতা সৃষ্টি করা।

পাঠ-৫. হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

হিসাববিজ্ঞান ছাড়া ব্যবসায় জগত কল্পনা করা যায় না। হিসাববিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সংখ্যাগত ও সিদ্ধান্তগত কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগীতা করে, ফলে এর গুরুত্ব অনেক বেশী পরিলক্ষিত হয়।

১। আর্থিক লেনদেন স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধকরণ

প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনগুলো স্থায়ীভাবে হিসাবের খাতায় লিপিবদ্ধ করা থাকলে ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য দ্রুত সরবরাহ সম্ভব হয়।

২। লাভ-লোকসান নিরূপণ

হিসাববিজ্ঞানের প্রধান উদ্দেশ্য হল মুনাফা অর্জন করা। মুনাফা হলে লাভ-লোকসান হিসাবের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়। প্রতিষ্ঠানে মুনাফা অর্জিত হলে, অনুকূলে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয় এবং ক্ষতি-অর্জিত হলে অন্যরকম সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

৩। প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নিরূপণ

হিসাবকাল শেষে ব্যবসায়ের উদ্বৃত্তপত্রের মাধ্যমে কি পরিমান সম্পত্তি, কি পরিমান দায় এবং কি পরিমান মূলধন রইল তা জানা যায়।

৪। আয় ব্যয়ের সমতা রক্ষাকরণ

সঠিক ভাবে হিসাবের খাতায় লেনদেন লেখা থাকলে প্রকৃতভাবে কতটুকু আয় এবং এর জন্য কতটুকু ব্যয় হয়েছে জানা যায়। কোন ক্ষেত্রে ব্যয় কমাতে হলে বা আয় বৃদ্ধি করতে হলে তা পরিস্কার বুঝতে পারা যায়।

৫। আর্থিক পরিকল্পনা প্রনয়ন

একটি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন রকম পরিকল্পনা গ্রহন করতে হয়। তার মধ্যে আর্থিক পরিকল্পনা অন্যতম। এ জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকি।

৬। ভুল সংশোধন

যেহেতু হিসাববিজ্ঞানের নির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করে লেনদেন লিপিবদ্ধ করে, সেহেতু এর মাধ্যমে হিসাবের ভুল সহজে সংশোধন করা যায়।

৭। গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই

দুই তরফা দাখিলার মাধ্যমে লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়। এজন্য খতিয়ানের ডেবিট ও ক্রেডিট জেরগুলো নিয়ে একটি রেওয়ামিল তৈরি করা হয়। যার মাধ্যমে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়।

৮। কর নির্ধারন

সঠিকভাবে হিসাব রাখলে আয়কর, বিক্রয়কর, সম্পদকর ইত্যাদি নির্ণয় করার জন্য কর কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহনযোগ্য আয় বিবরনী উপস্থাপন করা যায়।

হিসাববিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা

বর্তমানে কোন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নির্ভর করে উক্ত দেশের ব্যবসায়িক কর্মকান্ডের উপর। ফলে গতিশীল ব্যবসায়ে হিসাববিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম। হিসাববিজ্ঞানের তথ্য ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বেশী হবে উহার গুরুত্ব তত বৃদ্ধি পাবে।

নিম্নে হিসাববিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হল-

১। লাভ- লোকসান নিরূপণ

প্রতিটি কারবার প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য হল মুনাফা অর্জন করা। এ মুনাফা অর্জিত হল কিনা, তা লাভ ক্ষতি হিসাবের মাধ্যমে নিরূপণ করা সম্ভব যা হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ান্তে লাভ-লোকসান নিরূপণ করা হয়।

২। আর্থিক অবস্থা নিরূপণ

একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর যেমন লাভ-লোকসান নিরূপণ করা হয়, তেমনি ঐ সময়ে কি পরিমাণ দায় ও সম্পত্তি রইল তাহা নিরূপণ করা হয়। তাই হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রকৃত আর্থিক অবস্থা নিরূপণ সম্ভব হয়।

৩। তথ্য সরবরাহ

হিসাববিজ্ঞানের মাধ্যমে প্রতিটি লেনদেন স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়। তাই অতীতের কোন তথ্য প্রয়োজন হলে তা দ্রুত সরবরাহ করা সম্ভব হয় এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

৪। ব্যয় নিয়ন্ত্রক

যত কম ব্যয় সংগঠিত হবে তত বেশী মুনাফা অর্জিত হবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয়গুলো চিহ্নিত করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

৫। কর নিরূপণ

হিসাববিজ্ঞানের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে সঠিকভাবে হিসাব রাখা হলে আয়কর, বিক্রয়কর নির্ধারনের জন্য কর কর্তৃপক্ষের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য আয় বিবরণী তুলে ধরা সম্ভব।

পাঠ-৬. হিসাববিজ্ঞানের এর সাথে অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্ক

হিসাববিজ্ঞান তার কার্যক্রম নির্বাহ করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। নিম্নে যে সকল বিষয়ের সাথে হিসাবজ্ঞিানের সম্পর্ক অত্যন্ত কাছাকাছি তা আলোচনা করা হলো-

১। ব্যবস্থাপনা: হিসাববিজ্ঞান এর সাথে ব্যবস্থাপনার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ব্যবস্থাপনা সঠিক ও কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে হিসাববিজ্ঞান সকল ধরনের তথ্য সরবরাহ করে থাকে। হিসাববিজ্ঞান এর সরবরাহকৃত তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থাপক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পনা, নির্দেশনা, প্রেষণা, সমন্বয় সাধন ও নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সবকিছু হিসাববিজ্ঞান এর তথ্যের উপর নির্ভর করে ব্যবস্থাপক লভ্যাংশ ঘোষণা, বিক্রয় বাজেট, বাজেট তৈরী, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, মুনাফা বৃদ্ধি ইত্যাদি কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে।

২। অর্থনীতি: অর্থনীতির সাথেও হিসাববিজ্ঞান এর সম্পর্ক নিবিড়। অর্থনীতির বিষয়বস্তু অর্থাৎ আয়-ব্যয়, সম্পদ বিভাজন, ইত্যাদি হিসাববিজ্ঞান এর আলোচনা ক্ষেত্র বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অর্থনীতির কোন সিদ্ধান্ত অর্থাৎ কি পরিমাণ উৎপাদন হবে, কি ভাবে উৎপাদন হবে এবং কি পরিমাণ উৎপাদন খরচ হবে সবকিছু তথ্য হিসাববিজ্ঞান সরবরাহ করে থাকে। অতএব, হিসাববিজ্ঞান ও অর্থনীতি একে অপরের পরিপূরক ও সহায়ক।

৩। গণিত: বর্তমানে হিসাববিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ের মধ্যে বেশ যোগসূত্র দেখা যায়। হিসাববিজ্ঞান যেহেতু সংখ্যাগত বিষয় নিয়ে কার্যক্রম করে আবার গণিত শাস্ত্রের কার্যক্রম ও সংখ্যা ভিত্তিক তাই একে অপরে মধ্যে একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

৪। পরিসংখ্যান: পরিসংখ্যান বিষয়ের সাথে হিসাববিজ্ঞান এর সম্পর্ক নিবিড়। হিসাববিজ্ঞান কে সহায়তার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে পরিসংখ্যান তথ্য সংগ্রহ করে। তেমনিভাবে হিসাববিজ্ঞান ঐ সকল তথ্যসমূহ লিপিবদ্ধকরণ, শ্রেণীবদ্ধকরণ এবং সংক্ষিপ্তকরণ ইত্যাদি কার্যাবলীর মাধ্যমে পরিসংখ্যানিক উপায়ে অর্থাৎ লেখচিত্র, বার ডায়াগ্রাম, পাইচার্ট ইত্যাদি তথ্যসমূহ প্রকাশ করে থাকে।

৫। কম্পিউটার: বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটারের ব্যবহার সর্বত্র। কম্পিউটার কে ব্যবহার করে প্রতিটি ক্ষেত্র দিন দিন উন্নত সেবা নিশ্চিত করছে। তেমনিভাবে হিসাববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার এখন সর্বোচ্চ। হিসাববিজ্ঞানের প্রাথমিক ধাপ হতে শুরু করে অর্থাৎ লেনদেন লিপিবদ্ধ হতে শুরু করে আর্থিক বিশ্লেষণ পর্যন্ত কম্পিউটার ব্যবহার করে কার্যবলী সম্পূর্ণ করছে। এখন কম্পিউটারের উপর নির্ভর করে সরকারী প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান সমূহ কাজ করছে।

আরো পড়ুন :

পাঠ-৭. হিসাববিজ্ঞানের তথ্য ব্যবহারকারী

হিসাববিজ্ঞানের শেষ কাজ হলো তথ্য সরবরাহ করা। এই তথ্য প্রতিষ্ঠানের বাহিরে (External) এবং ভিতরে (Internal) উভয় পক্ষসমূহ ব্যবহার করে থাকে। হিসাববিজ্ঞানের তথ্য ব্যবহারকারীদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

হিসাববিজ্ঞান তথ্য ব্যবহারকারী

অভ্যন্তরীন ব্যবহারকারী: হিসাব কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপক, পরিচালক, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক, মালিক

বাহ্যিক ব্যবহারকারী: পাওনাদার, ভোক্তা, বণিক সমিতি, বিনিয়োগকারী, আয়কর কর্তৃপক্ষ, সরকার

অভ্যন্তরীন ব্যবহারকারী

১। হিসাব কর্মকর্তা: প্রতিষ্ঠানের হিসাব সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য হিসাব কর্মকর্তা প্রণয়ন করে। প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকান্ড নির্বাহ করতে বিভিন্ন সময় এ তথ্য প্রয়োজন হয়।

২। ব্যবস্থাপক: ব্যবস্থাপক তাঁর অধঃনস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে কাজ করার সময় এ সকল তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন রকমের নির্দেশনা, প্রেষণা ও নিয়ন্ত্রণ করেন।

৩। পরিচালক: প্রতিষ্ঠানের কোন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হলে, হিসাববিজ্ঞান সংক্রান্ত অনেক তথ্য প্রয়োজন হয়। হিসাববিজ্ঞানের তথ্য ছাড়া কোন পরিকল্পনা প্রনয়ন ও বাস্তবায়ন করা যায় না। তাই পরিচালকের নিকট এ তথ্য অতীব জরুরী।

৪। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষক: নিরীক্ষকের প্রধান কাজ হল, হিসাবের সত্যতা যাচাই করা এবং মূল্যায়ন করা। হিসাব তথ্য ছাড়া নিরীক্ষা কাজ করা অসম্ভব।

৫। স্বত্বাধিকারী: প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থের বিনিময়ে অর্জিত আয় সম্পর্কে জানার জন্য এ সকল তথ্য প্রয়োজন। তাদের মূলধন কতটুকু নিরাপত্তায় আছে এবং ভবিষ্যতের সাফল্য সম্পর্কে অনুমান করতে পারে।

বাহ্যিক ব্যবহারকারী

১। পাওনাদার: পাওনাদার ধারে পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। ফলে, উক্ত প্রতিষ্ঠানের দায় পরিশোধ করার ক্ষমতা আছে কিনা তা জানার জন্য হিসাব তথ্য প্রয়োজন।

২। ভোক্তা: প্রতিষ্ঠানের ভোক্তা হিসাব তথ্য ব্যবহার করেন। যখন পণ্য উৎপাদনের ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করে তখন পণ্যের মূল্যও কমে যায়। ফলে হিসাব তথ্য ভোক্তার জন্যেও প্রয়োজন আছে।

৩। বণিক সমিতি: কোন প্রতিষ্ঠানের হিসাব তথ্যের উপর পর্যালোচনা করে বণিক সমিতি তাদের নীতিমালা তৈরি করে।

৪। বিনিয়োগকারী: বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগকৃত অর্থ নিরাপত্তায় আছে কিনা তাহা জানতে চাইবে। হিসাব তথ্যের উপর নির্ভর করে পুনঃ বিনিয়োগ করবে, নাকি বিনিয়োগ উঠিয়ে নিবে এ সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

৫। আয়কর কর্তৃপক্ষ: কর ধার্যের সময় যে কোন প্রতিষ্ঠানের আয় বিবরণী প্রয়োজন। আয় বিবরণীতে সঠিক আয় প্রর্দশন করা হয়েছে কিনা তাজানা প্রয়োজন। সুতরাং হিসাব তথ্য ছাড়া কর ধার্য করা যায় না।

৬। ঋণদাতা: যে কোন ঋণদাতা উক্ত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে ঋণ প্রদান করেন। প্রতিষ্ঠানের ঋণ ও সুদ ফেরত, নিরাপত্তা বিবেচনা করে ঋণ প্রদান করেন।

৭। সরকার: দেশের সরকার প্রতিষ্ঠানের হিসাব তথ্য ব্যবহার করে। হিসাব তথ্যের উপর নির্ভর করে বিক্রয়কর, আয়কর, ও ভ্যাট ধার্য করে।

পাঠ-৮. ঘটনা ও লেনদেনের ধারণা

পৃথিবীতে যা কিছুই সংঘঠিত হয় তাই ঘটনা। মানুষের পারিবারিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনে প্রতিনিয়ত বহু ঘটনা ঘটছে। এই সকল ঘটনাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- অনার্থিক ঘটনা ও আর্থিক ঘটনা। যে সকল ঘটনার সাথে অর্থ জড়িত নয়, সেগুলোকে অনার্থিক ঘটনা বলা হয়। যেমনঃ জনাব রশিদ এর বড় ছেলে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেছে, জমিলার মেয়ের বিয়ের দাওয়াত পত্র পাওয়া গেল, এ সকল ঘটনাগুলো অর্থের সাথে সম্পর্কিত নয়, অর্থ দ্বারা পরিমাপযোগ্য নয়, ফলে এ ঘটনাগুলোকে অনার্থিক ঘটনা বলে। অপর পক্ষে, যে সকল ঘটনার সাথে অর্থ জড়িত সে সকল ঘটনাকে আর্থিক ঘটনা বলা হয়। যেমনঃ প্রতিষ্ঠান হতে ৬,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করা হলো, আসবাবপত্র ক্রয় করা হলো ৫,০০০ টাকা ইত্যাদি ঘটনা গুলোকে আর্থিক ঘটনা বলে। মূলতঃ আর্থিক ঘটনা থেকে লেনদেনের উৎপত্তি হয়, যা হিসাববিজ্ঞান এর নির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করে কারবারে লিপিবদ্ধ করা হয়।

লেনদেনের ধারণা: মনেকরি, জনাব রশিদ বাজার থেকে নগদ ৫০০০ টাকা দিয়ে ১০০০ কেজি ময়দা জনাব আকাশের নিকট হতে কিনে আনলেন। এখানে কতগুলো বিষয় লক্ষনীয় যেমন:

রশিদ ও আকাশ দুইটি পক্ষ আছে।

ঘটনাটি টাকার অংকে পরিমাপ যোগ্য অর্থাৎ ৫,০০০ টাকার বিনিময়ে ১,০০০ কেজি ময়দা পাওয়া গেছে।

উভয় পক্ষে আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। অর্থ্যাৎ মি. রশিদ ৫০০০ টাকা নগদ প্রদান করেছে এবং মি. আকাশ ৫,০০০ টাকা নগদ গ্রহণ করেছেন।

এটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘটনা।

উপরের ঘটনাটি পর্যালোচনা করে আমরা বলতে পারি এই ঘটনাটি একটি লেনদেন। সুতরাং আমরা বলতে পারি, যে সকল ঘটনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে তাকে লেনদেন বলে। আর, যে ঘটনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক পরিবর্তন ঘটে না সেগুলো লেনদেন নয়।

পাঠ-৯. লেনদেনের প্রকৃতি ও বেশিষ্ট্য

যে সকল ঘটনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে তাকে লেনদেন বলে। আর, যে ঘটনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে না সে গুলো লেনদেন নয়।

লেনদেনের প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে দেওয়া হল।

১। দুইটি পক্ষ: প্রতিটি লেনদেনের দুটি পক্ষ থাকে। যেমন জামাল সাহেব ৫০০০ টাকার ধান কামালের নিকট বিক্রয় করলো। এখানে জামাল ও কামাল দুটি পক্ষ জড়িত আছে।

২। অর্থ দ্বারা পরিমাপযোগ্য: ঘটনা যাই ঘটুক, সেটা অবশ্যই অর্থের মাধ্যমে পরিমাপযোগ্য হতে হবে। যেমন- বাজার থেকে ১০০০ টাকা দিয়ে একটি শার্ট কেনা হলো। এখানে শার্টের মূল্য ১০০০ টাকা দ্বারা পরিমাপ করা হয়েছে। অর্থাৎ অর্থ ছাড়া অন্য কোন এককে পণ্যের মূল্য নিরূপণ করা যাবে না।

৩। আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন: প্রতিটি লেনদেনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে। যেমন- কর্মচারী জাহিদকে বেতন দেওয়া হলো ৫০০০ টাকা। এটি একটি লেনদেন কারণ জাহিদকে বেতন দেওয়ার কারণে প্রতিষ্ঠান থেকে নগদ ৫০০০ টাকা কমে গেছে। তাই আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন না ঘটলে, সে ঘটনাকে লেনদেন বলা যাবে না।

৪। স্বয়ংসম্পূর্ন ও স্বতন্ত্র: প্রতিটি লেনদেন একে অপরের সাথে পৃথক সত্বা হবে। ধরুন, ১ তারিখে ১০,০০০ টাকার পণ্য ধারে বিক্রয় করা হল, এই বিক্রয়কৃত পণ্যের ১০,০০০ টাকা পাওয়া গেল ১০ তারিখে। এখানে ১ তারিখ এবং ১০ তারিখ দুটি ঘটনা পৃথক।

৫। দৃশ্যমানতা: প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন আনতে পারে এমন দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয় প্রকার ঘটনাই লেনদেন হিসাবে গণ্য হবে। যেমন- ব্যবসার জন্য ২০,০০০ টাকার একটি মেশিন ক্রয় করা হলো এটি দৃশ্যমান লেনদেন। আবার উক্ত মেশিনটি একবছর ব্যবহার করার ফলে মেশিনের মূল্য কমে যাবে। এই হ্রাসকৃতমূল্য কে অবচয় বলে। অবচয় যদিও দৃশ্যমান ঘটনা নয়, তবুও এটি একটি লেনদেন বলে গণ্য হবে।

পাঠ-১০. হিসাব সমীকরণ ও হিসাব সমীকরণে লেনদেনের প্রভাব

হিসাববিজ্ঞানের কার্যক্রমকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপন করা যায়। তাই হিসাববিজ্ঞান এর মূল বিষয়বস্তু গুলোকে (অর্থাৎ সম্পত্তি, দায়, মুলধন) যখন গাণিতিক চিহ্নের মাধ্যমে সম্পর্কযুক্ত করে উপস্থাপন করা হয় তখন তাকে হিসাব সমীকরণ বলে। হিসাব সমীকরণটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো, কোন নির্দিষ্ট তারিখে একটি প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদ উক্ত প্রতিষ্ঠানের দায় এবং মূলধনের সমষ্টির সমান।

হিসাব সমীকরণটি হলো: A=L+O.E/P এখানে, A= Asset (সম্পদ), L= Liabilities (দায়), O.E= Owners Equity (মালিকানা স্বত্ব/মুলধন)

হিসাবসমীকরণের মূল উপাদানগুলো হলো তিনটি (সম্পদ, দায়, ও মূলধন), প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সংঘটিত হলে সমীকরণে এই তিনটি উপাদানের উপর প্রভাব পড়ে। প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক আয়, ব্যয় এবং মালিক কর্তৃক উত্তোলন হলে মূলধনের উপর প্রভাব পড়ে। অর্থাৎ আয় অর্জিত হলে মূলধন বেড়ে যায় এবং ব্যয়, উত্তোলনের জন্য মূলধন কমে যায়। লেনদেনের কারণে হিসাবসমীকরণে পরিবর্তন ঘটে।

পরিবর্তিত হিসাব সমীকরণটি হলো: A=L+(C+R-E-D) এখানে, A= Assets (সম্পদ), L= Liabilities (দায়), C= Capital (মূলধন), R= Revenues (আয়), E= Expenses (ব্যয়), D= Drawings (উত্তোলন) অর্থাৎ A=L+C+R-E-D A+E+D=L+C+R সুতরাং, লেনদেন সংগঠিত হওয়ার ফলে সমীকরণের উপাদানগুলোর অভ্যন্তরে পরিবর্তন হলেও মৌলিক হিসাবসমীকরণে কোন প্রকার পরিবর্তন হয় না।

হিসাব সমীকরণের উপাদান: পূর্বে আপনারা জানতে পেরেছেন যে, হিসাবসমীকরণের (A=L+OE) এর মৌলিক উপাদান তিনটি। এগুলো সম্পর্কে নিম্নে বর্ননা করা হলো-

১। সম্পদ (Assets): প্রতিষ্ঠানের মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হবে এবং অর্থের অংকে পরিমাপযোগ্য কোন বস্তু বা সেবা সমষ্টিকে সম্পদ বলে। যেমন আসবাবপত্র, যন্ত্রপাতি, ব্যাংক জমা, দেনাদার, মজুদপণ্য ইত্যাদি। এ সমস্ত সম্পত্তি গুলো দুই রকমের হয়ে থাকে। এক হলো স্বল্প মেয়াদী (এক বছরের জন্য) অন্যগুলো হলো দীর্ঘমেয়াদী।

২। দায় (Liabilities): প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির উপর উক্ত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের অথবা বাহিরের পক্ষের যে দাবী থাকে তাকে দায় বলে। অর্থাৎ কোন কিছু গ্রহনের জন্য ভবিষ্যতে প্রদান করতে হতে হবে উহা হল দায় এই দায় দুই ধরণের হতে পারে এক দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী।

৩। মুলধন / মালিকানা স্বত্ব (Capital): প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পত্তি হতে বর্হিদায় বিয়োগ করলে মালিকানা স্বত্ব পাওয়া যায়। মালিকানা স্বত্ব প্রতিষ্ঠানের আয়, ব্যয় এবং উত্তোলনের ফলে পরিবর্তন হয়ে থাকে।

হিসাব সমীকরণে লেনদেনের প্রভাব

প্রতিষ্ঠানের কোন ঘটনা যদি হিসাব সমীকরণের এক বা একাধিক উপাদানকে প্রভাবিত করে, তাহলে উক্ত ঘটনাকে লেনদেন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কোন ঘটনাকে লেনদেন হতে হলে, হিসাব সমীকরণের উপাদানগুলোকে নিম্নলিখিত ভাবে প্রভাবিত করে।

ক) একটি সম্পদ বৃদ্ধি পেলে, অপর একটি সম্পদ কমবে।

খ) মোট সম্পদ বাড়লে, মোট দায় অথবা মালিকানা স্বত্ব বাড়বে।

গ) মোট সম্পদ কমলে, মোট দায় অথবা মালিকানা স্বত্ব কমবে।

ঘ) মালিকান স্বত্ব কমলে, মোট দায় বাড়বে।

ঙ) মালিকানা স্বত্ব বাড়লে, মোট দায় কমবে।

উদাহরণসহ হিসাব সমীকরণে লেনদেনের প্রভাব

১। নগদ ৫০,০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করা হল এখানে মালিকানা স্বত্ব ও সম্পত্তি উভয় বৃদ্ধি পেয়েছে

২। নগদে কলকব্জা ক্রয় ৫,০০০ টাকা নগদ সম্পদ হ্রাস এবং কলকব্জা সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে।

৩। বাড়ী ভাড়া বাবদ চেক প্রদান করা হল ৮০০০ টাকা এখানে (ব্যাংক) সম্পদ হ্রাস ও মালিকানা স্বত্ত্ব হ্রাস পেয়েছে (যেহেতু বাড়ী ভাড়া প্রদান)

৪। প্রদেয় বিল পরিশোধ করা হল ১২০০ টাকা এখানে সম্পদ হ্রাস (নগদ) এবং দায় হ্রাস পেয়েছে।

৫। বাকীতে মাল ক্রয় ১৮০০০ টাকা এখানে দায় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মালিকানা স্বত্ত্ব হ্রাস পেয়েছে। (কালান্তিক মজুদপণ্য হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী)

৬। বিনিয়োগের সুদ পাওয়া গেল ১৫০০ টাকা এখানে সম্পদ (নগদ) এবং মালিকানা স্বত্ত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে

৭। নগদে মাল বিক্রয় করা হল ১০০০০ টাকা এখানে সম্পদ (নগদ) এবং মালিকানা স্বত্ত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে

গাণিতিক সমস্যার উদাহরণ: মিসেস অদ্বীতিয়া সি.এ. কোর্স সম্পূর্ন করে ২০১৪ সালে ১ জুন তারিখে একটি সি,এ. ফার্ম চালু করেন। জনু মাসে নিম্নক্ত লেনদেন গুলো সংগঠিত হয়-

জুন ০১: মূলধন বাবদ নগদ ৮০,০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসায় শুরু করেন।

জুন ০৪: ব্যাংক হিসাব খোলা হলো ৫,০০০ টাকা।

জুন ০৬: ধারে অফিস সরঞ্জাম ক্রয় করেন ৩০,০০০ টাকা।

জুন ১০: নগদে নিরীক্ষা কার্য সম্পাদন করা হল ৩০,০০০ টাকা।

জুন ১২: ব্যাংক হতে লোন নেওয়া হলো ২০,০০০ টাকা।

জুন ১৫: ধারে নিরীক্ষা কার্য সম্পাদন করা হল ১৫,০০০ টাকা

জুন ২০: অফিসের কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হল ১৫,০০০ টাকা

জুন ২৫: ঘর ভাড়া বাবদ চেক প্রদান ২,০০০ টাকা।

জুন ৩০: ধারে ক্রয়কৃত অফিস সরঞ্জাম এর মূল্য পরিশোধ ১৫,০০০ টাকা।

পাঠ – ১১. ব্যবসায়িক লেনদেনকে চিহ্নিত করার পদ্ধতি এবং ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ

প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বহু ঘটনা ঘটে থাকে। এ ঘটনাগুলোর মধ্যে সকল ঘটনা লেনদেনে রুপান্তরিত হয় না। যে সকল ঘটনাগুলো লেনদেনে রুপান্তরিত হয়, শুধু সেই সকল ঘটনাগুলো হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ করা হয়। নিম্নে কিভাবে লেনদেন চিহ্নিত করা হয় তা উল্লেখ করা হলো।

লেনদেন চিহ্নিত করা যায় দুটি উপায়ে-

১। বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে লেনদেন চেনার উপায় যে সকল ঘটনাগুলো নিম্নের শর্তগুলো পূরণ করে সেগুলো লেনদেন হবে।

ক) ঘটনাটি অর্থের মাপকাটিতে পরিমাপ যোগ্য হতে হবে।

খ) ঘটনাটি ব্যবসায়ের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে।

গ) ঘটনাটির কম পক্ষে দুইটি পক্ষ থাকবে।

২। সমীকরণের মাধ্যমে লেনদেন চেনার উপায়ঃ

হিসাববিজ্ঞানের উপাদান সমূহ যে গাণিতিক সূত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে হিসাব সমীকরণ বলে। একটি নির্দিষ্ট হিসাবকাল শেষে মোট সম্পদ এর পরিমাণ, মালিকানাস্বত্ব ও বর্হিদায়ের সমষ্টির সমান হবে। আধুনিক হিসাববিজ্ঞানীগণ হিসাব সমীকারণের মাধ্যমে লেনদেন চিহ্নিতকরণের একটি সমীকরণ ব্যবহার করেন। সমীকরণটি হলো A = L + OE। নিম্নে উদাহরণের সাহায্যে দেখানো হলো, হিসাব সমীকরণের ভিত্তিতে কোন ঘটনা দ্বারা হিসাব সমীকরণের উপাদানসমূহ কিরূপ পরিবর্তন হলে সে ঘটনাকে লেনদেন বলা হয়।

কোন ঘটনা লেনদেন হতে হলে তা হিসাব সমীকরনের উপাদানগুলোতে নিম্নোক্ত যে কোন একটি পরির্বতন ঘটাবে-

(ক) একটি সম্পদ বৃদ্ধি পেলে অপর একটি সম্পদ হ্রাস পাবে।

(খ) মোট সম্পদ হ্রাস পেলে মোট দায় বা মালিকানাস্বত্ব হ্রাস পাবে।

(গ) মোট সম্পদ বৃদ্ধি পেলে মোট দায় বা মালিকানাস্বত্ব বৃদ্ধি পাবে।

(ঘ) মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি পেলে মোট দায় কমবে।

(ঙ) মালিকানা স্বত্ব হ্রাস পেলে মোট দায় বৃদ্ধি পাবে।

(চ) আয় বৃদ্ধি পেলে মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি পাবে।

(ছ) খরচ বৃদ্ধি পেলে মালিকানা স্বত্ব হ্রাস পাবে।

জনাব সাকিব একজন খুচরা ব্যবসায়ী। ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসে নিম্নলিখিত ঘটনাগুলো সংঘটিত হয়েছিল।

এখানে কোন ঘটনাগুলো লেনদেন তা চিহ্নিত কর এবং কারণসহ ব্যাখ্যা কর।

১। ব্যবসায়ে ৫০,০০০ টাকা মূলধন নিয়ে আসেন।

২। নিজ প্রয়োজন নগদ ৫০০ টাকা উত্তোলন করে।

৩। ব্যবসায় থেকে একজন ক্রেতার ভ্যান গাড়ী চুরি হয়ে যায়। যার মূল্য ২০,০০০ টাকা।

৪। মালিক তার মেয়েকে ৫,০০০ টাকা দিয়ে ১ টি মোবাইল কিনে দিবে বলে আশ্বাস দেন।

৫। অফিসের জন্য ৮,০০০ টাকায় আসবাসপত্র ক্রয় করেন।

৬। হাবিবকে ৬,০০০ টাকা মাসিক বেতনে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

পাঠ-১২. হিসাব ও হিসাবের শ্রেণীবিভাগ

কারবার প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অনেক রকমের লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকে এবং সঠিকভাবে লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকে। এখানে সঠিকভাবে লেনদেন গুলো লিপিবদ্ধ করার পরে সমজাতীয় লেনদেনগুলো একটি নির্দিষ্ট শিরোনামে এবং ছক অনুযায়ী শ্রেণীভুক্ত করাই হলো হিসাব।

হিসাবের শ্রেণীবিভাগ:

দুই তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুযায়ী হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট সঠিক ভাবে নির্ণয় করতে হলে হিসাবের শ্রেনীবিভাগ সম্পর্কে প্রয়োনীয় ধারণা থাকা আবশ্যক। এখানে আধুনিক পদ্ধতি অনুযায়ী হিসাবের শ্রেনী বিভাগ করা হলো। আধুনিক পদ্ধতি অনুযায়ী হিসাবকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১। সম্পত্তি হিসাব

২। দায় হিসাব

৩। মালিকানা স্বত্ব হিসাব।

এখানে মালিকানা স্বত্বকে ৪ (চার) ভাগ করা যায়ঃ

মালিকানা স্বত্বঃ

ক) মুলধন হিসাব

খ) আয় হিসাব

গ) ব্যয় হিসাব

ঘ) উত্তোলন হিসাব

নিম্নে বিভিন্ন হিসাবের আলোচনা করা হলো-

১। সম্পদ হিসাব

হিসাববিজ্ঞান এর মতে প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে এবং যা থেকে ভবিষ্যতে সেবা বা উপযোগ পাওয়া যাবে তাকে সম্পদ বলে। এই সম্পদ দীর্ঘ মেয়াদী ও স্বল্প মেয়াদী হতে পারে। যেমন- যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র, দেনাদার, অগ্রিম ব্যয় ইত্যাদি।

২। দায় হিসাব

যে সকল লেনদেনর বিপরীতে তৃতীয় পক্ষকে ভবিষ্যতে প্রদান করতে হবে অথবা ভবিষ্যতে প্রদেয় তাকে ব্যয় বলে। যেমন-পাওনাদার, ব্যাংক ঋণ, বকেয়া খরচ ইত্যাদি।

৩। মালিকানা স্বত্বা

কারবার প্রতিষ্ঠান পরিচালনার মাধ্যমে মালিক পক্ষের পাওনাকে বা দাবীকে মালিকানা স্বত্বা বলে। এই মালিকানা স্বত্বা বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধি হ্রাস হয়ে থাকে। আয় বা উপার্জনের মাধ্যমে মালিকানা স্বত্বা বৃদ্ধি পায় এবং ব্যয় ও উত্তোলনের মাধ্যমে মালিনাকা স্বত্বা হ্রাস পেয়ে থাকে।

হিসাবের বৈশিষ্ট্য

হিসাববিজ্ঞনের হিসাবের বৈশিষ্ট্য সমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১। শিরোনাম: যে কোন হিসাবের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শিরোনাম। প্রতিটি হিসাবের ক্ষেত্রে শিরোনামের ভিত্তিতে সমজাতীয় লেনদেনসমূহ হিসাবভুক্ত করা হয়। যেমন-সমস্ত কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত লেনদেনগুলো বেতন শিরোনামে লিপিবদ্ধ করা হয়।

২। হিসাবের ছক: হিসাববিজ্ঞানের প্রতিটি হিসাবের নির্দিষ্ট ছক থাকবে। এখানে হিসাবের ছক দুই ধরনের হতে পারে। “টি” ছক এবং “চলমান জের” ছক প্রচলিত আছে।

৩। হিসাব কোড: আধুনিক হিসাববিজ্ঞান কম্পিউটার ব্যবহার করে হিসাব সংরক্ষণ করে। তাই সমজাতীয় লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট কোড ব্যবহার করা হয়। যেমন বেতন হিসাবের কোড নং-৩০৩।

৪। ডেবিট ও ক্রেডিট: প্রতিটি হিসাবের ডেবিট দিক এবং ক্রেডিট দিক উল্লেখ থাকতে হবে। কারণ প্রতিটি লেনদেনের ডেবিট দিক ও ক্রেডিট দিক উল্লেখ করে লিপিবদ্ধ করা হয়।

৫। জের তৈরী: একটি হিসাবের জের তৈরীর মাধ্যমে কতটুকু ডেবিট জের অথবা কতটুকু ক্রেডিট জের তা নির্নয় হয়। যেমন নগদান হিসাব জের তৈরী করে কত টাকা ডেবিট জের তা জানা যায়।

৬। সমাপ্তি রেখা: হিসাববিজ্ঞানের রীতি অনুযায়ী হিসাবের উভয় দিকের যোগফলের নীচে দুইটি সমান্তরাল রেখা টেনে হিসাব শেষ করা হয়।

৭। তারিখ: “টি” ছকের ক্ষেত্রে হিসাবের ডেবিট দিকে ও ক্রেডিট দিকে তারিখ উল্লেখ করা হয়। চলমান জের পদ্ধতিতে এক দিকে তারিখ উল্লেখ করা হয়।

এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্রের ১ম অধ্যায় হিসাববিজ্ঞান পরিচিতি নোট/গাইড PDF Download

Facebook
X
LinkedIn
Telegram
Print

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Stay Connected

Subscribe our Newsletter

Scroll to Top