এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্রের ২য় অধ্যায় হিসাবের বইসমূহ একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এখান থেকে প্রতিবছর ২/৩টি সৃজনশীল প্রশ্ন থাকে। এই লেকচারে আলোচনা করা হয়েছে হিসাবের বইসমূহ: দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধা, মূলনীতি বা বৈশিষ্ট্যসমূহ; হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়মাবলী; হিসাবচক্রের ধারণা এবং ধাপসমূহ; হিসাবের প্রাথমিক বইয়ের ধারণা ও শ্রেণীবিভাগ; জাবেদার ধারণা, সুবিধা এবং গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা, জাবেদার ছক, জাবেদাভুক্তিকরণের নিয়মাবলী; মূল্য সংযোজন কর এবং এর হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি; নগদান বইয়ের ধারণা, বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা; খতিয়ানের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা । আরো আছে গুরুত্বপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন তাই আমাদের হিসাবের বইসমূহ লেকচার শীটটি পিডিএফ ফাইলে ডাউনলোড করুন ।।
ভূমিকা: হিসাবের বইসমূহ
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন প্রকার হিসাবের বইসমূহ ব্যবহার করা হয়। সংঘটিত লেনদেনসমূহ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি মোতাবেক জাবেদা বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং জাবেদা বহি হতে সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ বিভিন্ন প্রকার হিসাবের বই সংরক্ষণ করে। যেমনঃ ক্রয় বহি, বিক্রয় বহি, ক্রয় ফেরত বহি, বিক্রয় ফেরত বহি, নগদ প্রাপ্তি ও নগদ প্রদান সংক্রান্ত বহি প্রভৃতি।
দু’তরফা দাখিলা, হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট, হিসাব চক্র, হিসাবের বই, জাবেদা বই, নগদ বাট্টা, কারবারি বাট্টা, পরিমাণ বাট্টা, ডেবিট নোট, ক্রেডিট নোট, ক্রয় বহি, নগদান বহি, বিক্রয় বহি, মূল্য সংযোজন কর, খতিয়ান বাহি, খুচরা নগদান বহি।
পাঠ-১. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির ধারণা
দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির ধারণাঃ- হিসাববিজ্ঞানের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রাচীন যুগের মানুষেরাও পাথর এবং দড়িতে গিরা দিয়ে হিসাব রাখতেন। তাদের হিসাব রাখার পদ্ধতি উন্নত বা সঠিক ছিল না। মানুষ যুগে যুগে যতই সভ্যতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে হিসাবের গুরুত্ব ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। হিসাবের এই গুরুত্ব অনুভব করে সবচেয়ে আধুনিক ও যুগান্তকারী তত্ত্বটি ১৪৯৪ খ্রিঃ-এ আবিষ্কার করেন ইটালির ভেনিস শহরের বিখ্যাত গাণিতিক ধর্মযাজক ও দার্শনিক লুকা প্যাসিওলি (Luca Pacioli)। তাঁকে হিসাববিজ্ঞানের জনক বা রেঁনেসা মানব বলা হয়। সর্বপ্রথম হিসাববিজ্ঞানের উপর রচিত তাঁর বইয়ের নাম Summa de Arithmetica, Geometria, Proportianet Proportionalite. এই বইয়ের একটি অধ্যায়ে তিনি দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তখন থেকেই দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির প্রয়োগ হিসাববিজ্ঞানে পরিলক্ষিত হয়। “দু’তরফা” বলতে আমরা দুইটি পক্ষকে বুঝি। হিসাববিজ্ঞানে ব্যবহৃত দুইটি পক্ষ যেমন গ্রহীতা পক্ষ (Debit) এবং দাতা পক্ষ (Credit), অর্থাৎ এক পক্ষ ‘গ্রহিতা’ সুবিধা গ্রহণ করে এবং অপর পক্ষ ‘দাতা’ সুবিধা প্রদান করে। সংঘটিত প্রতিটি লেনদেনের এই ডেবিট এবং ক্রেডিট বিশ্লেষণকে লেনদেনের দ্বৈত সত্ত্বা বলে। এ কারণেই দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞানসম্মত হিসাব পদ্ধতি।
সুতরাং যে হিসাব ব্যবস্থায় প্রতিটি আর্থিক লেনদেনসমূহকে দ্বৈত সত্ত্বায় বিশ্লেষণ করে এক পক্ষকে ডেবিট এবং সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা অপর পক্ষকে ক্রেডিট করে হিসাবভুক্ত করা হয় তাকে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি বলে।
পাঠ-২. দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধা, মূলনীতি বা বৈশিষ্ট্যসমূহ
দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির সুবিধা
দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি হিসাব রাখার একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি যা সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। আধুনিক যুগে এই পদ্ধতির ব্যবহার সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়। নিচে ইহার সুবিধাসমূহ বর্ণনা করা হলোঃ
১। গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইঃ এ পদ্ধতিতে লেনদেনসমূহ সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা ডেবিট এবং ক্রেডিট করে লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে ডেবিট ও ক্রেডিট পার্শ্বের যোগফল সমান হয়ে থাকে। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে রেওয়ামিল প্রস্তুত করে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা যায়।
২। সার্বিক অবস্থা নির্ণয়ঃ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি প্রয়োগের ফলে হিসাবকাল শেষে মুনাফাজাতীয় আয় ও ব্যয় দ্বারা আয় বিবরণী প্রস্তুত করা হয় এবং মূলধনজাতীয় আয় ও ব্যয় দ্বারা উদ্বৃত্ত পত্র তৈরি করা হয়। ফলে হিসাবকাল শেষে কারবারের সঠিক অবস্থা প্রদর্শিত হয়।
৩। তৃতীয় পক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্যতাঃ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি এবং সর্বজনস্বীকৃত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করলে সরকার, আয়কর কর্তৃপক্ষ এবং পাওনাদারগণের কাছে হিসাবের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।
৪। মূল্য নির্ধারণঃ এই পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মূল্য ও অন্যান্য সম্পত্তির মূল্য নিরূপণ সহজ হয়।
৫। ভুল-ত্রুটি হ্রাসঃ যেহেতু লেনদেনের ডেবিট পক্ষ এবং ক্রেডিট পক্ষ বিশ্লেষণ করে সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা রেকর্ড করা হয়। এতে ভুল-ত্রুটি এবং জালিয়াতি হ্রাস পায়।
৬। তথ্য সরবরাহঃ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতিতে হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের ফলে ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় নিখুঁত তথ্য দ্রুত সরবরাহ করা যায়।
৭। জবাবদিহিতাঃ এ পদ্ধতি সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে জবাবদিহিতার সৃষ্টি হয়।
মূলনীতি বা বৈশিষ্ট্য (Feature or Principle of Double Entry System)
হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে দু’তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতি একমাত্র নির্ভরযোগ্য ও সর্বোত্তম হিসাব পদ্ধতিরূপে গণ্য হয়ে আসছে। এ পদ্ধতির কিছু বৈশিষ্ট্য বা মূলনীতি নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
১। দুটি পক্ষঃ সংঘটিত প্রতিটি লেনদেনসমূহে দুটি পক্ষ থাকে। এক পক্ষ গ্রহীতা এবং অপর পক্ষ দাতা।
২। সমপরিমাণ অর্থঃ লেনদেনসমূহের দ্বৈত সত্ত্বা বিশ্লেষণ করে এক পক্ষকে ডেবিট এবং সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা অপর পক্ষকে ক্রেডিট করা হয়।
৩। স্বয়ং সম্পূর্ণঃ প্রতিটি লেনদেন স্বয়ংসম্পূর্ণ ও পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৪। পৃথক সত্ত্বাঃ দু’তরফা দাখিলা হিসাব পদ্ধতিতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে মালিকপক্ষ থেকে পৃথক বলে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে এক পক্ষ এবং মালিককে অপর পক্ষ বিবেচনা করা হয়। সুতরাং ইহাদের মধ্যে পৃথক সত্ত্বা বিদ্যমান।
৫। ডেবিট ও ক্রেডিটঃ লেনদেনে সুবিধা গ্রহণকারী ডেবিট এবং সুবিধা প্রদানকারী ক্রেডিট পক্ষ হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে।
৬। বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ হিসাব ব্যবস্থাঃ বৈজ্ঞানিক সূত্রসমূহ প্রয়োগ করে এ পদ্ধতিতে হিসাব সংরক্ষণ করা হয় এবং হিসাব চক্রের ধাপগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করা হয়। ফলে হিসাবসমূহে বিজ্ঞানসম্মত ও পূর্ণাঙ্গ হিসার প্রকাশ পায়।
পাঠ-৩. হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়মাবলী
হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র/ছাত্রীদের হিসাব নিকাশ সংক্রান্ত জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। সংঘটিত লেনদেনসমূহ হিসাবের প্রাথমিক বই-এ লিপিবদ্ধ করতে হলে হিসাবের ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়মাবলী সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা প্রয়োজন। হিসাবের ডেবিট এবং ক্রেডিট বলতে কি বুঝায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
ডেবিট এবং ক্রেডিট: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সকল লেনদেনসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। এক পক্ষকে ডেবিট এবং সমপরিমাণ অর্থ দ্বারা অপর পক্ষকে ক্রেডিট করা হয়। সাধারণত ডেবিট শব্দের অর্থ গ্রহীতা এবং ক্রেডিট শব্দের অর্থ দাতা বুঝায়। কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় খরচ এবং সম্পদের আগমন ঘটলে উক্ত হিসাবকে ডেবিট করতে হবে এবং বিপরীত হিসাবকে ক্রেডিট করতে হবে। অনুরূপভাবে প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আয় এবং যাবতীয় দায়সমূহ উক্ত হিসাব দ্বারা ক্রেডিট করতে হবে এবং বিপরীত হিসাবসমূহ দ্বারা ডেবিট করতে হবে।
হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের নিয়ম: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সংঘটিত লেনদেনসমূহকে দু’ভাবে ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয় করা যায়। যথাঃ
১। সনাতন বা শ্রেণীভিত্তিক নিয়ম
২। আধুনিক বা হিসাব সমীকরণ ভিত্তিক নিয়ম।
১। সনাতন বা শ্রেণীভিত্তিক নিয়ম:
এই পদ্ধতি অনুসারে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সংঘটিত সকল লেনদেনসমূহকে নিম্নে উল্লেখিত শ্রেণীতে বিভক্ত করে ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করতে হবে।
ক) ব্যক্তিবাচক হিসাব: কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সাথে লেনদেন সংঘটিত হলে এই নিয়মে ডেবিট ও ক্রেডিট করতে হবে।
খ) সম্পত্তিবাচক হিসাব: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যে সকল সম্পত্তি ক্রয়/বিক্রয় করা হয় উক্ত সম্পত্তির ডেবিট/ক্রেডিট এই নিয়মে করতে হবে।
গ) নামিক হিসাব: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ফলে ব্যয় ও আয় সংঘটিত হয়। ব্যবসায়ের সকল প্রকার ব্যয়, খরচ বা ক্ষতিকে ডেবিট করতে হবে। পক্ষান্তরে সকল প্রকার লাভ বা আয়কে ক্রেডিট করতে হবে।
সংক্ষেপে
ক) ব্যক্তিবাচক হিসাবঃ গ্রহীতা ডেবিট এবং দাতা ক্রেডিট।
খ) সম্পত্তিবাচক হিসাবঃ ব্যবসায়ে সম্পত্তি আসলে ডেবিট আবার সম্পত্তি চলে গেলে ক্রেডিট।
গ) নামিক হিসাবঃ খরচ বা ক্ষতি বুঝালে ডেবিট আবার আয় বা লাভ হলে ক্রেডিট।
২। আধুনিক বা হিসাব সমীকরণভিত্তিক নিয়ম (Modern or Accounting Equation Base Rules)
আধুনিক হিসাববিদগণ মনে করেন হিসাব সমীকরণ (A=L+OE) এর ভিত্তিতে ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয় করা যায়।
সমীকরণ: A = L + OE
এখানে, OE = Capital + Income Expenses – Drawings.
সুতরাং সমীকরণের মূল উপাদান হলোঃ সম্পত্তি, খরচ, দায়, আয় ও মালিকানা স্বত্ত্ব বা মূলধন।
ডেবিট ও ক্রেডিট নির্ণয়ের আধুনিক নিয়মঃ
ক) সম্পত্তি: সম্পদ বৃদ্ধি ডেবিট, হ্রাস ক্রেডিট
খ) খরচ/ব্যয় : ব্যয় বৃদ্ধি ডেবিট, হ্রাস ক্রেডিট
গ) দায় : দায় বৃদ্ধি ক্রেডিট, হ্রাস ডেবিট
ঘ) আয়: আয় বৃদ্ধি ক্রেডিট, হ্রাস ডেবিট
ঙ) মূলধন : মূলধন বৃদ্ধি ক্রেডিট, হ্রাস ডেবিট।
পাঠ-৪. হিসাবচক্রের ধারণা এবং ধাপসমূহ
ভূমিকাঃ বিগত বছরের হিসাবের উদ্বৃত্ত বা জের সমূহের সাথে চলতি বছরের হিসাবের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা প্রয়োজন। নিখুঁত বা নির্ভুল হিসাব প্রস্তুতের জন্য হিসাব চক্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
ধারাবাহিকতাঃ বিগত বছরের হিসাবের উদ্বৃত্ত নিয়েই চলতি বছরের হিসাব শুরু হয়ে থাকে। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি আলোচনা করা হলোঃ-
মিঃ রহমান ১ জানু/২০১৬ সনে ২০,০০০ টাকা নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করেন। ৩১ শে ডিসেম্বর/২০১৬ সনে তার মুনাফা বা লাভ হলো ৪,০০০ টাকা। ৩১ শে ডিসেম্বর/২০১৬ সনে তার মোট মূলধনের পরিমাণ হবে (২০,০০০ + ৪,০০০) বা ২৪,০০০ টাকা। এখন প্রশ্ন হলো, ১ জানু/২০১৭ সালে তার মূলধন কত? উত্তরে বলা যায়, ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১৬ সালের ২৪,০০০ টাকাই হবে তার মূলধন। অর্থাৎ বিগত বছরের সমাপনী মূলধন ২০১৭ সালের প্রারম্ভিক হিসাবে গণ্য হবে। এভাবেই হিসাবের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়।
হিসাব চক্র (Accounting Cycle)
হিসাববিজ্ঞানের কার্যক্রম ধাপে ধাপে বা পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ হিসাববিজ্ঞান হলো একটি ধারাবাহিক কার্য প্রক্রিয়া। অর্থাৎ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সংঘটিত লেনদেনগুলোকে শ্রেণীবিন্যাস করে প্রথমে জাবেদা, জাবেদা হতে খতিয়ানে, খতিয়ানের উদ্বৃত্ত নিয়ে গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করার জন্য রেওয়ামিল প্রস্তুত, রেওয়ামিল হতে আয় বিবরণী ও আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়। পরবর্তীতে আর্থিক বিশ্লেষণের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এভাবেই হিসাব কার্যসমূহ শেষ হয়ে যায়। একটি হিসাব কাল (Accounting Period) শেষ হলে পরবর্তী হিসাব কালেও (Next Accounting Period) ঐ একই কার্যক্রম শুরু করতে হবে। এভাবেই হিসাবসমূহ প্রতি বছর চক্রাকারে ঘুরতে থাকে। সুতরাং হিসাব কার্যক্রম চক্রাকারে আবর্তিত (ঘুরা) হয় বলে এই আবর্তন প্রক্রিয়াকে হিসাবচক্র বলে। প্রখ্যাত লেখক J.R. Batliboi বলেন, “The order or sequence in which the accounting procedures are performed is known as accounting cycle.” অর্থাৎ যে ক্রম বা ধারাবাহিকতায় হিসাববিজ্ঞান প্রক্রিয়ায় কার্য সম্পাদিত হয় তাকে হিসাব চক্র বলে।
হিসাব চক্রের ধাপসমূহ (Steps of Accounting Cycle)
আধুনিক হিসাববিজ্ঞানীদের মতে যে কয়টি ধাপ চক্রাকারে আবর্তিত হয় তা নিচে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করা হলো।
১। লেনদেন চিহ্নিতকরণ (Identification of Transaction): ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সংঘটিত লেনদেনসমূহ সর্বপ্রথম চিহ্নিত করতে হবে।
২। লেনদেন বিশ্লেষণ (Analysis of Transaction): এই ধাপে সংঘটিত লেনদেনগুলোর হিসাবখাত চিহ্নিত করতে হবে।
৩। লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ (Recording of Transaction): এই ধাপে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি মোতাবেক ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয় করে নির্দিষ্ট ছকে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৪। শ্রেণীবিন্যাসকরণ বা খতিয়ান (Classification of Transaction): সমজাতীয় লেনদেনগুলো একটি নির্দিষ্ট শিরোনামে সংক্ষিপ্ত আকারে হিসাবের পাকা বইতে স্থানান্তর করা হয়।
৫। সংক্ষিপ্তকরণ বা রেওয়ামিল (Summerization of Transaction): এই ধাপে খতিয়ানের উদ্বৃত্ত দ্বারা গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাইয়ের জন্য রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়। ফলে রেওয়ামিলের উভয় পার্শ্বের যোগফল সমান হবে।
৬। সমন্বয় জাবেদা (Adjusting Enties): সঠিক আর্থিক অবস্থা নিরূপণের জন্য বকেয়া ও অগ্রিম আয় এবং ব্যয়ের জন্য বা অলিখিত বা ভুলত্রুটির জন্য সমন্বয় দাখিলা দেওয়া হয়।
৭। সমন্বিত রেওয়ামিল (Adjusting Trial Balance): এই ধাপে সমন্বয় দাখিলা দেওয়ার পরে সমন্বিত উদ্বৃত্ত নিয়ে সমন্বিত রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয়।
৮। কার্যপত্র (Worksheet): এটি একটি ঐচ্ছিক ধাপ। ছোট ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কার্যপত্রের প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের পূর্বে কার্যপত্র তৈরি করে থাকে।
৯। আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতকরণ (Preperation of Financial Statement): এটি হিসাব চক্রের মূল ধাপ। হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারীদের জন্য হিসাব কাল শেষে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করা হয়।
১০। সমাপনী দাখিলা (Closing Entries): আর্থিক বিবরণী প্রস্তুতের পরে মুনাফাজাতীয় হিসাবসমূহ বন্ধ করার জন্য সমাপনী দাখিলা দিতে হয়।
১১। সমাপনী উত্তর রেওয়ামিল (Post Closing Trial Balance): সমাপনী দাখিলার মাধ্যমে মুনাফা জাতীয় হিসাব সমূহ বন্ধ হয়ে যায় এবং অবশিষ্ট হিসাবগুলো নিয়ে সমাপনী উত্তর রেওয়ামিল প্রস্তুত করতে হয়।
১২। বিপরীত দাখিলা (Reversal Entries): বিপরীত দাখিলা হিসাব চক্রের ঐচ্ছিক ও শেষ ধাপ। বকেয়া ও অগ্রিম আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত সমন্বয় দাখিলার (Adjusting Enties) বিপরীত দাখিলা হয়।
পাঠ-৫. হিসাবের প্রাথমিক বইয়ের ধারণা ও শ্রেণীবিভাগ
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সংঘটিত লেনদেনসমূহ সর্বপ্রথম হিসাবের প্রাথমিক বই-এ লিপিবদ্ধ করতে হয়। কাজেই হিসাবের প্রাথমিক বই সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
হিসাবের বই (Books of Accounts): সংঘটিত লেনদেনসমূহ হিসাবের বই-এ লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়। লিপিবদ্ধকরণ
প্রক্রিয়া দুইভাবে করা হয়ে থাকে। যেমন জাবেদা বহি এবং খতিয়ান হিসাবের মাধ্যমে। লেনদেনগুলোকে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি মোতাবেক বিশ্লেষণ করে সর্বপ্রথম জাবেদা বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এজন্য জাবেদাকে হিসাবের প্রাথমিক বই বলা হয়। জাবেদা বহি হইতে লেনদেনগুলোকে পরবর্তীতে খতিয়ান বহিতে স্থায়ীভাবে স্থানান্তর করা হয়। কাজেই খতিয়ান বহিকে স্থায়ী বা পাকা বই বলা হয়।
জাবেদা (Journal): ইংরেজী “Journal” শব্দটি ফরাসী “Jour” শব্দ থেকে এসেছে। “Jour” শব্দটির অর্থ হলো দিবস বা দিন। প্রতিদিনের সংঘটিত লেনদেনসমূহ প্রথমে এই বই-এ রেকর্ড করা হয় বলেই এর নাম হয়েছে Journal বা জাবেদা। সুতরাং এ কারণেই এই বইকে হিসাবের প্রাথমিক বহি বলে।
জাবেদার শ্রেণীবিভাগ (Sub-division of Journal): যে সমস্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অসংখ্য লেনদেন সংঘটিত হয়, সে ক্ষেত্রে একটি মাত্র জাবেদা বই-এ হিসাব রাখা কষ্টসাধ্য, দুরূহ এবং সময় সাপেক্ষ। কাজেই এ সকল অসুবিধা দূর করার জন্য জাবেদার শ্রেণীবিভাগের প্রয়োজন। সংঘটিত লেনদেনের প্রকৃতি অনুসারে জাবেদার শ্রেণীবিভাগ দেখানো হল:
বিশেষ জাবেদাঃ যে জাবেদা বহিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু সংঘটিত লেনদেন লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে বিশেষ জাবেদা বলে। নিচে বিশেষ জাবেদাগুলো আলোচনা করা হলোঃ-
১। ক্রয় জাবেদা: শুধুমাত্র ধারে পণ্য ক্রয় সংক্রান্ত লেনদেনগুলো ক্রয় জাবেদা বহিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।
২। বিক্রয় জাবেদা: শুধুমাত্র ধারে পণ্য বিক্রয় সংক্রান্ত লেনদেনগুলো বিক্রয় জাবেদা বহিতে অন্তর্ভুক্ত হবে।
৩। ক্রয় ফেরত জাবেদা: ধারে ক্রয়কৃত পণ্য ফেরত দিলে ক্রয় ফেরত বহিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৪।বিক্রয় ফেরত জাবেদা: ধারে বিক্রীত পণ্য ফেরত পাওয়া গেলে বিক্রয় ফেরত বহিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে।
৫। নগদান বহি: প্রতিষ্ঠানের সকল প্রকার নগদ লেনদেনগুলো নগদান বহিতে লিপিবদ্ধ করতে হবে। আবার নগদান বহিকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। তবে বৃটিশ পদ্ধতি এবং আমেরিকান পদ্ধতি উভয় পদ্ধতি পৃথকভাবে আলোচনা করা হলো।
আরো পড়ুন :
বৃটিশ পদ্ধতি নগদান বহি নিম্নরূপঃ
ক) এক ঘরা নগদান বহি: এই নগদান বহির ডেবিট কলাম এবং ক্রেডিট কলাম থাকে। এক ঘরা নগদান বহি নগদান খতিয়ানের অনুরূপ। সাধারণতঃ ছোট ছোট ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান এক ঘরা নগদান বহি ব্যবহার করে থাকে।
খ) দু’ঘরা নগদান বহি: যে নগদান বহির উভয় পার্শ্বে নগদান ও ব্যাংক কলাম থাকে তাকে দু’ঘরা নগদান বহি বলে।
গ) তিন ঘরা নগদান বহি: যে নগদান বহির উভয় পার্শ্বে নগদান, ব্যাংক ও বাট্টার কলাম থাকে তাকে তিন ঘরা নগদান বহি বলে।
ঘ) খুচরা নগদান বহি ছোট-খাটো খরচের জন্য খুচরা নগদান বহির প্রয়োজন দেখা যায়। সাধারণত: বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ খুচরা নগদান বহি ব্যবহার করে থাকে।
আমেরিকান পদ্ধতি
ক) নগদ প্রাপ্তি জাবেদা সকল প্রকার নগদ প্রাপ্তিসমূহ এই জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়।
খ) নগদান প্রদান জাবেদা সকল প্রকার নগদ প্রদান সংক্রান্ত লেনদেনগুলো এই বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে।
প্রকৃত জাবেদা: যে সকল লেনদেনসমূহ বিশেষ জাবেদায় লিপিবদ্ধ হয় না সেগুলো প্রকৃত জাবেদায় লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। নিম্নে প্রকৃত জাবেদার শ্রেণীবিভাগ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১। প্রারম্ভিক জাবেদা: বিগত বছরের হিসাবের জের সমূহ চলতি বছরে আনার জন্য যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় তাকে প্রারম্ভিক জাবেদা বলে।
২। সমাপনী দাখিলা: হিসাব কাল শেষে নামিক হিসাবসমূহ (আয় ও ব্যয় সংক্রান্ত) বন্ধ করার জন্য যে জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় তাকে সমাপনী দাখিলা বলে।
৩। সমন্বয় জাবেদা: অসমন্বিত লেনদেনগুলো একটি নির্দিষ্ট “হিসাব কাল” শেষে সমন্বয়ের জন্য যে দাখিলা দেওয়া হয় তাকে সমন্বয় জাবেদা বলে।
৪। ভুল সংশোধনী জাবেদা: লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধকরণের সময় যে সমস্ত ভুল ত্রুটি হয়ে থাকে তা সংশোধনের জন্য যে দাখিলা দেওয়া হয় তাকে ভুল সংশোধন জাবেদা বলে।
৫। স্থানান্তর জাবেদা: একটি হিসাবের জের যখন অন্য কোন হিসাবে স্থানান্তরের প্রয়োজন পড়ে তখন উহার জন্য যে দাখিলা দেওয়া হয় তাকে স্থনান্তর জাবেদা বলে।
৬। বিপরীত দাখিলা: অগ্রীম আয়-ব্যয়ের হিসাবগুলো পরবর্তী বছরে স্থানান্তর করার জন্য যে দাখিলা দেওয়া হয় তাকে বিপরীত দাখিলা বলে।
পাঠ-৬. জাবেদার ধারণা, সুবিধা এবং গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকাঃ ব্যবসায়ের সংঘটিত লেনদেনগুলো তারিখ অনুযায়ী হিসাবের বহিতে রেকর্ড করে রাখা হয়। তাই হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারীগণ যে কোন সময় তাদের চাহিদা মোতাবেক তথ্য পেয়ে থাকেন।
ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন অসংখ্য লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকে। এই সমস্ত লেনদেনগুলো রোজের ক্রমানুসারে হিসাববিজ্ঞানের নীতি অনুযায়ী হিসাবের বহিতে রেকর্ড করা হয়। লেনদেনগুলি সর্বপ্রথম যে বহিতে রেকর্ড করা হয় তাকে হিসাবের প্রাথমিক বহি, দৈনিক হিসাবের বহি, ধারাবাহিক হিসাবের বহি, মৌলিক হিসাবের বহি এবং জাবেদা বহি বলে অভিহিত করা হয়। সুতরাং সংঘটিত লেনদেনসমূহ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির নিয়ম অনুযায়ী ডেবিট/ক্রেডিট নির্ণয় করে সর্বপ্রথম যে বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে জাবেদা বহি বলে। অধ্যাপক চেম্বারের মতে, “জাবেদা এমন এক বই যাতে দৈনিক সংঘটিত লেনদেনসমূহ লিখে সংরক্ষণ করা হয়। অধ্যাপক ওয়েকসন ও অধ্যাপক ফক্স এর মতে, “জাবেদা হিসাবের প্রাথমিক বই যাতে লেনদেনগুলো তারিখের ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ করা হয়।”
জাবেদার সুবিধা (Advantage of Journal):
সংঘটিত লেনদেনগুলো সরাসরি খতিয়ান বহিতে রেকর্ড করতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই অসুবিধাসমূহ দূর করার জন্য জাবেদা বহি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিচে কয়েকটি সুবিধা উল্লেখ করা হল:
১। দ্রুত রেকর্ড: লেনদেনসমূহ সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে রোজের ক্রমানুসারে জাবেদা বহিতে লেখা হয়।
২। নির্ভুল হিসাব: সংঘটিত লেনদেনগুলো সাথে সাথে লিপিবদ্ধ হয় বলে হিসাবের কোন তথ্য বাদ পড়ে না। ফলে ব্যবসায়ীর হিসাবসমূহ নির্ভুল ও নিখুঁত হয়ে থাকে।
৩। তথ্য প্রাপ্তির সুবিধা: তথ্যের ব্যবহারকারীগণ অতি সহজেই যে কোন তথ্য জাবেদা বহি হতে পেয়ে থাকেন।
৪। খতিয়ানের সাহায্যকারী: জাবেদা বহি হতে অতি সহজেই খতিয়ান বহি প্রস্তুত করা যায়।
জাবেদার গুরুত্ব বা প্রয়োজনীয়তা (Importance/Necessity of Journal):
সংঘটিত লেনদেনসমূহ খতিয়ানে রেকর্ড করতে গেলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কাজেই নির্ভুল হিসাব প্রস্তুতের জন্য জাবেদা বহির প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে জাবেদার প্রয়োজনীয়তা নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১। তথ্য কেন্দ্র: সংঘটিত লেনদেনসমূহ ধারাবাহিকভাবে তারিখের ক্রমানুসারে জাবেদা বহিতে লিপিবদ্ধ হয় বলে যে কোন তথ্য এই বহিতে অতি সহজেই পাওয়া যায়।
২। লেনদেনের সংখ্যা: প্রতিদিন কতগুলো লেনদেন সংঘটিত হয়েছে তা এই বহি থেকে সহজেই হিসাব পাওয়া যায়।
৩। দু’তরফা দাখিলার প্রয়োগ: সংঘটিত লেনদেনগুলো দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি মোতাবেক ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয় করে এই বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে হিসাববিজ্ঞানের রীতিনীতি যথাযথ ভাবে অনুসরণ করা হয়।
৪। নির্ভুল খতিয়ান প্রস্তুত: ধরাবাহিকভাবে লেনদেনগুলো রোজের ক্রমানুসারে জাবেদা বহিতে লেখা হয়। জাবেদা বহি হতে খতিয়ান হিসাব প্রস্তুত করা হয় বলে খতিয়ান বহি নির্ভুল হয়ে থাকে। অর্থাৎ কোন হিসাব বাদ পড়ে না।
৫। ভুল ও জালিয়াতি হ্রাস: প্রাথমিকভাবে লেনদেনসমূহ তারিখের ক্রমানুসারে জাবেদা বহিতে ব্যাখ্যাসহ লিপিবদ্ধ করা হয়। ফলে কোন হিসাব বাদ পড়ে না বা জালিয়াতি করার সুযোগ থাকে না।
৬। সময় হ্রাস: বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ জাবেদার শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী লেনদেনসমূহ রেকর্ড করে থাকে বলে সময় বাঁচে এবং হিসাবের কাজও নির্ভুল হয়।
৭। ভুল বুঝাবুঝি নিরসন: ধরাবাহিকভাবে লেনদেনগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় বলে ভুল হয় না এবং পক্ষগণের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি হলে অতি সহজেই তা নিরসন করা যায়।
পাঠ-৭. জাবেদার ছক, জাবেদাভুক্তিকরণের নিয়মাবলী
ভূমিকা: সংঘটিত লেনদেনগুলো হিসাববিজ্ঞানের রীতিনীতি অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট ছকে উপস্থাপন করতে হয়। এ অধ্যায়ে আমরা ছক অংকন এবং কিভাবে জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হবে তার কৌশল শিখব।
জাবেদাকরণের নিয়মাবলী (Rules of Journalising):
নিচে জাবেদাভুক্তকরণের নিয়মাবলী আলোচনা করা হলোঃ
১। জাবেদার ছক: লেনদেনসমূহ লিপিবদ্ধ করার পূর্বে জাবেদার ছককে ৫টি ঘরে বিভক্ত করতে হবে।
২। তারিখের ঘর: যে তারিখে লেনদেন সংঘটিত হয়। তারিখের ঘরে বছর, মাস এবং দিন লিখতে হবে।
৩। বিবরণের ঘর: লেনদেনগুলোকে বিশ্লেষণ করে হিসাবের খাত নির্ণয় করতে হবে। দু’তরফা দাখিলার সূত্র মোতাবেক হিসাব খাতের ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয় করে ব্যাখ্যাসহ বিবরণের ঘরে লিখতে হবে।
৪। খতিয়ানের ঘর: জাবেদাভুক্ত হিসাবখাত দুটি খতিয়ানের যে পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে সেই পৃষ্ঠার নম্বর “খতিয়ান পৃষ্ঠার ঘরে” লিখতে হবে।
৫। ডেবিট টাকার ঘর: হিসাবখাত দুটির ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয় করে শুধুমাত্র ডেবিট টাকা এই ঘরে বসবে। ৬। ক্রেডিট টাকার ঘর: হিসাবখাত দুটির ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয় করে শুধুমাত্র ক্রেডিট টাকা এই ঘরে বসবে।
৭। সমান্তরাল রেখা: ব্যাখ্যাসহ একটি লেনদেন লিপিবদ্ধকরণ প্রক্রিয়া শেষ হলে বিবরণের ঘর একটি রেখা টেনে বন্ধ করতে হবে।
৮। অপর পৃষ্ঠায় স্থানান্তর: একাধিক পৃষ্ঠায় জাবেদা করা হলে প্রত্যেক পৃষ্ঠার যোগফল পরবর্তী পৃষ্ঠায় স্থানান্তর করতে হবে। যে পৃষ্ঠা হতে স্থানান্তরিত হবে সেই পৃষ্ঠার নিচে লিখতে হবে “অপর পৃষ্ঠায় নীত হলো”। আবার যে পৃষ্ঠায় মোট টাকা আনতে হবে সেই পৃষ্ঠার প্রথমে লিখতে হবে “অপর পাতা হতে আনীত”।
৯। সমাপ্তি রেখা: সংঘটিত লেনদেনগুলোর জাবেদাভুক্তকরণের কাজ শেষ হলে মোট টাকার ঘরে সমাপ্তি রেখা ( = ) টেনে হিসাব বন্ধ করতে হবে।
কারবারি বাট্টা: (Trade Discount) পণ্যের তালিকা মূল্য থেকে যে পরিমাণ টাকা ছাড় দিয়ে বিক্রেতা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেন তাকে কারবারি বাট্টা বলে। কারবারি বাট্টার জন্য কোন প্রকার জাবেদা দাখিলা দেওয়া হয় না। কাজেই কারবারি বাট্টা হিসাব নিকাশে কোন প্রভাব ফেলে না। ব্যবসায়ী বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য এই প্রকার বাট্টা প্রদান করে থাকেন। একটি উদাহরণের মাধ্যমে বিষয়টি পরিস্কার করা যাক। বাজারে বিক্রীত পণ্যের কভারে খুচরা মূল্য লেখা থাকে। ধরা যাক আপনি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্র বই কিনবেন। বইটির মূল্য তালিকা লেখা আছে ৩০০ টাকা। আপনি বইটি ক্রয় করতে গেলে ২০% ছাড় পাবেন। অর্থাৎ (৩০০ × ২০%) = ৬০ টাকা কমে ২৪০ টাকায় বইটি কিনতে পারবেন। এখানে ৬০ টাকা হবে কারবারি বা ব্যবসায়িক বাট্টা।
নগদ বাট্টা (Cash Discount): বাকীতে পণ্য দ্রব্য বিক্রয়ের ফলে বিবিধ দেনাদার বা প্রাপ্য হিসাবে উদ্ভব হয়। দীর্ঘদিন বাকী টাকা আদায় না হলে ব্যবসায়ের ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যায়। কাজেই দেনাদারের নিকট হতে দ্রুত টাকা আদায়ের জন্য কিছু টাকা ছাড় দেওয়া হয়। একেই নগদ বাট্টা বলে। নগদ বাট্টা হিসাবের বইতে লিপিবদ্ধ হয়। আবার যে বাট্টা দেয় তার কাছে প্রদত্ত বাট্টা হয়। পাওনা টাকা দ্রুত আদায়ের জন্য বিক্রয়ের সময় কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। যেমন 2/10 Net 30, অর্থাৎ ১০ দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করলে ২% বাট্টা পাবে নচেৎ ৩০ দিনের মধ্যে পাওনা পরিশোধ করতে হবে। বাট্টা সময়ের পরে সাকুল্য টাকা পরিশোধ করতে হবে।
প্রাপ্ত বাট্টা (Discount Received): ধারে মাল ক্রয় করলে পাওনাদার বা প্রদেয় হিসাবের উদ্ভব হয়। পাওনাদারের টাকা নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে পরিশোধ করলে বাট্টা পাওয়া যায় তাকে প্রাপ্ত বাট্টা বলে।
প্রদত্ত বাট্টা (Discount Allowed): ধারে মাল বিক্রয় করলে দেনাদারের উদ্ভব হয়। পাওনা টাকা দ্রুত আদায়ের জন্য যে বাট্টা ছাড় দেওয়া হয় তাকে প্রদত্ত বাট্টা বলে।
পরিমাণ বাট্টা (Quantity Discount): বিক্রেতা ক্রেতাকে অধিক পণ্য ক্রয়ের জন্য এই প্রকার বাট্টা প্রদান করেন। যেমন এক প্যাকেট (১কেজি) গুড়ো সাবান কিনলে ১টা মগ ফ্রি। এই ১টা মগ হচ্ছে পরিমাণ বাট্টা। পরিমাণ বাট্টাকে কারবারি বাট্টা বলা হয়।
বিভিন্ন প্রকার জাবেদার ধারণা ও জাবেদা প্রস্তুতকরণ
ক্রয় জাবেদা, ক্রয় ফেরত জাবেদা, চালানের নমুনা, বিক্রয় জাবেদা, বিক্রয় ফেরত জাবেদা, ডেবিট নোট, নগদ প্রাপ্তি জাবেদা, নগদ প্রদান জাবেদা, প্রকৃত জাবেদা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।
ভূমিকা: যে সমস্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানসমূহে লেনদেনের সংখ্যা কম সেই সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ একটি মাত্র সাধারণ জাবেদা বহিতে হিসাব লিপিবদ্ধ করে থাকেন। কিন্ত ব্যবসায়ের আকার-আকৃতি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে লেনদেনের সংখ্যা বেড়ে যায়। হিসাব রক্ষকের পক্ষে এসকল লেনদেনসমূহ একা লিপিবদ্ধ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কাজেই লেনদেনগুলোকে বিভিন্ন প্রকার জাবেদা বহিতে লিপিবদ্ধকরণের প্রয়োজন পড়ে।
জাবেদার ধারণা (Concept of Journal): লেনদেনের প্রকৃতি অনুযায়ী বিশেষ লেনদেনসমূহ বিশেষ জাবেদায় লিপিবদ্ধ করা হয়। আধুনিক নিয়মে বিশেষ জাবেদার সংখ্যা ৭টি। নিম্নে বিশেষ জাবেদাগুলো দেখানো হলোঃ ১। ক্রয় জাবেদা, ২। বিক্রয় জাবেদা, ৩। ক্রয় ফেরত জাবেদা, ৪। বিক্রয় ফেরত জাবেদা, ৫। নগদ প্রাপ্তি জাবেদা, ৬। নগদ প্রদান জাবেদা, ৭। সাধারণ জাবেদা
পাঠ-১০. মূল্য সংযোজন কর এবং এর হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি
ভূমিকা: ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে প্রথম মূল্য সংযোজন কর চালু হয়। এই ভ্যাট ব্যবস্থা চালুর ফলে সরকারের রেভিনিউ খাতে এক অনন্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে।
মূল্য সংযোজন কর (Value Added Tax)
মূল্য সংযোজন করের সংক্ষিপ্ত রূপ ভ্যাট (Vat)। সর্বপ্রথম এটি ১৯১৮ সালে জার্মানিতে চালু হয়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সরকার আমাদের দেশে এই ভ্যাট প্রথা চালু করেন। কোন উৎপাদিত পণ্য বা সেবার সংযোজিত মূল্যের উপর যে কর ধার্য করা হয় তাকে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট বলে। এই Vat কে ব্যয় কর হিসাবেও অভিহিত করা যেতে পারে। যেহেতু ব্যয়ের উপর মূল্য সংযোজন কর আরোপ করা হয় কাজেই একে ব্যয় কর বলা হয়। আমাদের দেশে প্রচলিত ভ্যাটের হার ১৫%।
মূল্য সংযোজন করের হিসাবরক্ষণ পদ্ধতি (Accounting System of Value Added Tax): ব্যবসায়ীগণ পণ্য বা সেবার ক্রয়মূল্যের সাথে যে ব্যয় বা মূল্য সংযোজন করে থাকেন তার উপর সরকার ১৫% ভ্যাট আরোপ করেন। ব্যবসায়ীগণ পণ্য বা সেবা ক্রয়ের সময় ভ্যাট প্রদান করে থাকেন। আবার পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের সময় ভ্যাট আদায় করেন। এর ফলে প্রাপ্ত ভ্যাট এবং প্রদত্ত ভ্যাটের উদ্বৃত্ত অংশ সরকারি কোষাগারে ব্যবসায়ীগণ জমা করেন। নিচে ভ্যাট সংক্রান্ত জাবেদা দাখিলা দেওয়া হলো।
১। ভ্যাট চলতি হিসাব খোলার জন্য
ভ্যাট চলতি হিঃ ডেঃ
নগদান হিঃ ক্রেঃ
২। পণ্য ক্রয়ের সময় ভ্যাট প্রদান করলে:
ক্রয় হিঃ ডেঃ
প্রদত্ত ভ্যাট/ ক্রয় ভ্যাট ডেঃ
নগদান হিঃ / পাওনাদার হিঃ ক্রেঃ
৩। পণ্য বিক্রয়ের সময় ভ্যাট আদায় হলে:
নগদান হিঃ / দেনাদার হিঃ ডেঃ
বিক্রয় হিঃ ক্রেঃ
প্রাপ্ত ভ্যাট/বিক্রয় ভ্যাট ক্রেঃ
৪। ভ্যাট চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত অংশ সরকারি কোষাগারে জমা করলে:
ভ্যাট চলতি হিঃ ডেঃ
নগদান হিঃ ক্রেঃ
লক্ষণীয়ঃ প্রাপ্ত ভ্যাট এবং প্রদত্ত ভ্যাট ব্যবসায়ের আয় বা ব্যয় কোনটিও নয়। যিনি পণ্য দ্রব্য ভোগ করেন তিনি ভ্যাটের অর্থ বহন করেন। ব্যবসায়ীগণ শুধুমাত্র সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাটের হিসাব সংরক্ষণ করেন এবং ভ্যাটের চলতি হিসাবের উদ্বৃত্ত অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে থাকেন।
পাঠ-১১. নগদান বইয়ের ধারণা, বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকা: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লেনদেনসমূহ নগদে এবং ধারে সংঘটিত হয়ে থাকে। তন্মধ্যে নগদ লেনদেনসমূহ নগদান বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। “নগদান বহি” হতে যে কোন সময় নগদ উদ্বৃত্তের পরিমাণ জানা যায়। নগদ অর্থকে ব্যবসায়ের চালিকা শক্তি বলা হয়। কাজেই নগদান বহি যথাযথভাবে প্রস্তুত করা একান্ত প্রয়োজন। নগদান বই (Cash Book): যে হিসাবের বহিতে যাবতীয় নগদ সম্পর্কিত লেনদেনসমূহ প্রাথমিকভাবে রোজের ক্রমানুসারে লিপিবদ্ধ করা হয়, তাকে নগদান বই বলে। এই বহিতে নগদের সমতুল্য যেমন- বিদেশী মুদ্রা, চেক, ব্যাংক ড্রাফট এবং পে-অর্ডার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। এই বহিকে ডেবিট এবং ক্রেডিট দুভাগে বিভক্ত করা হয়। ব্যবসায়ে নগদ অর্থের আগমন ঘটলে ডেবিট পার্শ্বে এবং বর্হিগমন ঘটলে ক্রেডিট পার্শ্বে লিপিবদ্ধ করতে হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে নগদ উদ্বৃত্ত/তহবিলের পরিমাণ জানা যায়। হাতে নগদ অর্থ এবং নগদান বহির উদ্বৃত্তের সাথে মিলকরণ করা হয়। এভাবেই নগদ অর্থ নিয়ন্ত্রণের কাজ সম্পন্ন হয়।
নগদান বহি বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন- ১। একঘরা, ২। দু’ঘরা, ৩। তিনঘরা ৪। বহুঘরা খুচরা নগদান বহি।
নগদান বইয়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ (Features of Cash Book)
১। প্রাপ্তি ও প্রদান সংরক্ষণ: ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান রোজের ক্রমানুসারে এই বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। কোন অনগদ লেনদেন লিপিবদ্ধ হয় না।
২। উদ্বৃত্ত নির্ণয়: নগদান বহির ডেবিট পার্শ্বের যোগফলের সাথে ক্রেডিট পার্শ্বের যোগফলের পার্থক্য নির্ণয় করে উদ্বৃত্ত নির্নয় করা হয়। নগদ বহির উদ্বৃত্ত সব সময়ই ডেবিট উদ্বৃত্ত প্রকাশ করে। অর্থাৎ নগদ প্রাপ্তির পরে নগদ খরচ বা প্রদান করা হয় বলে কখনও প্রদান বেশি হতে পারে না। তবে ব্যাংক ব্যালেন্স/ উদ্বৃত্ত এর ক্ষেত্রে ডেবিট ব্যালেন্স এবং ক্রেডিট ব্যালেন্স হতে পারে। ব্যাংকের ডেবিট ব্যালেন্স হলে ব্যাংকে জমা বুঝায় এবং ক্রেডিট ব্যালেন্স হলে ব্যাংকে জমাতিরিক্ত বুঝায়।
৩। জাবেদা ও খতিয়ান উভয়ই: নগদ আদান প্রদান সংক্রান্ত লেনদেনগুলো প্রাথমিকভাবে নগদান বহিতে লেখা হয়। তাই একে জাবেদাও বলা হয়। নগদান বহির অবকাঠামো খতিয়ান বহির অনুরূপ। কাজেই নগদান বহিকে খতিয়ান বহিও বলা হয়।
৪। রেওয়ামিলে স্থানান্তর: যেহেতু নগদান বহি খতিয়ান বহির অনুরূপ কাজেই নগদ উদ্বৃত্ত সরাসরি রেওয়ামিলে স্থানান্তর করা যায়। এ জন্য নগদান বহির আলাদা খতিয়ানের প্রয়োজন হয় না।
৫। দ্বৈত সত্ত্বা: নগদান বহিতে নগদ সম্পর্কিত সকল লেনদেন লিপিবদ্ধকরণের ক্ষেত্রে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।
নগদান বইয়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা (Importance and Necessity of Cash Book):
যে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য নগদান বহি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অসংখ্য নগদ লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকে। এগুলো নগদান বহিতে রেকর্ড না করলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তহবিল তছরূপ ঘটবে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার চালিকা শক্তি হারিয়ে ফেলবে। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
১। নগদ প্রাপ্তি ও পরিশোধ সম্পর্কে অবগত নগদান বইয়ের মাধ্যমে নগদ প্রাপ্তি ও প্রদান সম্পর্কে জানা যায়। ফলে একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে নগদ তহবিলের পরিমাণ জানা যায়। ভবিষ্যত নগদ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সহজ হয়।
২। তথ্য সর্ম্পকে অবগত: নগদান বইয়ের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে নগদ তহবিল, ব্যাংক উদ্বৃত্ত, প্রাপ্ত বাট্টা এবং প্রদত্ত বাট্টার পরিমাণ জানা যায়।
৩। তহবিল তছরূপে: বর্তমানে সকল প্রতিষ্ঠান নগদান বহি সংরক্ষণ করে থাকে। প্রতিদিনের লেনদেনগুলো এ বহিতে রেকর্ড করা হয় এবং দৈনিক ক্যাশ ব্যালেন্স এর সাথে মিলকরণ করা হয়ে থাকে। ফলে কোনরূপ তহবিল তছরূপ সম্ভব হয় না।
৪। নগদ ব্যবস্থাপনা: নগদ তহবিলকে ব্যবসায়ের হৃদপিন্ড বলা হয়ে থাকে। নগদ তহবিলের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে না পারলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কার্যত: প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কাজেই নগদ অর্থের আগমন ও নির্গমন দেখে নগদান বাজেট তৈরি করা হয়।
৫। অলস অর্থের ব্যবহার: প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থের আগমন ও নির্গমন দেখে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যদি অতিরিক্ত নগদ অর্থ হাতে থাকে তবে উহা স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করা যায়। এভাবে অলস অর্থের সঠিক ব্যবহার করা যায়। উপরোক্ত আলোচনা হতে বুঝা যায় যে, নগদান বহির গুরুত্ব অপরিসীম।
পাঠ-১৩. খুচরা নগদান বই, প্রকারভেদ, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকাঃ বড় বড় প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন প্রচুর লেনদেন সংঘটিত হয়ে থাকে। তাই ছোট খাটো খরচের হিসাব রাখা হিসাবরক্ষকের পক্ষে সম্ভব হয় না। কাজের পরিধি কমানোর জন্য ছোট ক্যাশিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়। এতে বড় ক্যাশিয়ারের শ্রম ও সময় বাঁচে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানে খুচরা নগদান বহির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
খুচরা নগদান বহি (Petty Cash Book): বড় বড় প্রতিষ্ঠানে দৈনন্দিন ছোট খাট খরচসমূহ লিপিবদ্ধ করার জন্য যে বিশেষ নগদান বহি ব্যবহার করা হয় তাকে খুচরা নগদান বহি বলে। খুচরা নগদান বহি প্রধান ক্যাশিয়ারের সহায়ক নগদান বহি হিসাবে বিবেচিত। প্রধান ক্যাশিয়ারের শ্রম ও সময় বাঁচানোর জন্যই খুচরা নগদান বহির প্রধান উদ্দেশ্য। এই বহিতে ছোট খাটো খরচ যেমন কাগজ, কালি, যাতায়াত, ডাক টিকিট, আলপিন ক্রয় ইত্যাদি খরচসমূহ লিবিবদ্ধ হয়ে থাকে। একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে খুচরা নগদান বহি থেকে মোট খরচের পরিমাণ সংশ্লিষ্ট খতিয়ানে স্থানান্তর করা হয়।
খুচরা নগদান বহির প্রকারভেদ (Classification of petty cash book): বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ দৈনন্দিন ছোট খাট খরচসমূহ হিসাবভুক্ত করার জন্য বিভিন্ন প্রকার খুচরা নগদান বহি ব্যবহার করে থাকে। কোন ধরণের খুচরা নগদান বহি ব্যবহার করবে তা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্তের উপর। নিচে খুচরা নগদান বহির প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো:
১। সাধারণ খুচরা নগদান বহি (Simple petty cash book)।
২। বহুঘরা বা বিশ্লেষণাত্মক খুচরা নগদান বহি (Columnar or Analytical petty cash book) ।
৩। অগ্রদত্ত নিয়মে খুচরা নগদান বহি (Imprest system petty cash book)।
আরো পড়ুন :
সাধারণ খুচরা নগদান বহি: সাধারণ খুচরা নগদান বহি একঘরা নগদান বহির অনুরূপ। প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট হতে অর্থ গ্রহণ করলে এই বহির ডেবিট পার্শ্বে লিখতে হবে। আবার প্রতিদিনের ছোট খাট খরচসমূহ এই বহির ক্রেডিট পার্শ্বে লিখতে হবে। সুতরাং যে বহিতে প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট হতে প্রাপ্ত অর্থ এবং ছোট-খাট খরচসমূহ তারিখ অনুসারে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে সাধারণ খুচরা নগদান বহি বলে।
বহুঘরা বা বিশ্লেষণাত্মক খুচরা নগদান বহি: যে বহিতে প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট থেকে প্রাপ্ত অর্থ ডেবিট পার্শ্বে এবং ছোট-খাট খরচসমূহ বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট ঘরে ক্রেডিট পার্শ্বে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে বিশ্লেষণাত্মক খুচরা নগদান বহি বলে। এই নগদান বহিতে ডেবিট পার্শ্বে একটি ঘর এবং ক্রেডিট পার্শ্বে মোট টাকার পরিমাণসহ অনেকগুলো ঘর থাকে। ক্রেডিট পার্শ্বে সংশ্লিষ্ট খরচসমূহ স্ব স্ব ঘরে লিপিবদ্ধ করা হয়।
অগ্রদত্ত নিয়মে খুচরা নগদান বহি: এই পদ্ধতিতে প্রধান ক্যাশিয়ার ছোট ক্যাশিয়ারকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের খুচরা ব্যয় নির্বাহের জন্য কিছু পরিমাণ টাকা অগ্রিম প্রদান করে থাকেন। একটি নির্দিষ্ট সময়ের খুচরা খরচের বিবরণী প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট পেশ করা হয়। প্রধান ক্যাশিয়ার খুচরা খরচের ভাউচার যাচাই বাছাই করে তা বুঝে নেন এবং যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয় তা আবার ছোট ক্যাশিয়ারকে প্রদান করেন। এতে করে পূর্বে প্রাপ্ত অর্থের সমপরিমাণ দাঁড়ায়।
সুতরাং যে বহিতে প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট হতে অগ্রিম প্রাপ্ত অর্থ ডেবিট পার্শ্বে এবং খরচসমূহ বিশ্লেষণ পূর্বক স্ব স্ব ঘরে ক্রেডিট পার্শ্বে রেকর্ড করা হয় এবং নির্দিষ্ট সময়ের ব্যয়িত সমপরিমাণ অর্থ প্রধান ক্যাশিয়ারের নিকট হতে গ্রহণ করা হয় তাকে অগ্রদত্ত খুচরা নগদান বহি বলে।
পাঠ-১৫. খতিয়ানের সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
ভূমিকাঃ সংঘটিত লেনদেনগুলো দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতি অনুসারে ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয় করে প্রাথমিক ভাবে জাবেদা বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট সময় শেষে জাবেদা বহি হতে খাতওয়ারী হিসাব পাওয়া যায় না। তাই জাবেদা বহি হতে নির্দিষ্ট শিরোনামের অধীনে হিসাবগুলোকে তারিখের ক্রমানুসারে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা হয়।
খতিয়ান (Ledger): ইংরেজী “Ledge” শব্দের অর্থ হচ্ছে “তাক”। তাকের ইংরেজী শব্দ সেল্ফ। অর্থাৎ গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিষপত্র এই তাক বা সেল্ফে সাজিয়ে রাখা হয়। অনেকেই মনে করেন যে, “Ledge” শব্দ হতেই “Ledger” শব্দের উৎপত্তি। সুতরাং সমজাতীয় হিসাবসমূহ নির্দিষ্ট শিরোনামের অধীনে সাজিয়ে রাখা হয়। জাবেদা বহি হতে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা, দেনা পাওনা ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায় না। খতিয়ান বহি হতে এ সকল বিষয়ে ধারণা লাভ করা যায়। এ ছাড়া সংঘটিত লেনদেনসমূহ প্রথমে জাবেদা বহিতে লিপিবদ্ধ করা হয়ে থাকে। পরবর্তীতে জাবেদা বহি হতে নির্দিষ্ট শিরোনামের অধীনে পাকাপাকিভাবে বা স্থায়ীভাবে হিসাবগুলো সংরক্ষণ করা হয়। এজন্য খতিয়ান বহিকে হিসাবের পাকা বহি বা স্থায়ী হিসাবের বহি বলা হয়। সুতরাং যে হিসাবের বহিতে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সকল লেনদেনসমূহ শ্রেণিবিন্যাস পূর্বক স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট শিরোনামের অধীনে সংক্ষিপ্ত আকারে বা পাকাপাকিভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খতিয়ান বহি বলে। অর্থাৎ খতিয়ান হলো সকল লেনদেনের স্থায়ী ভান্ডার। নিচে দু’জন লেখকের সংজ্ঞা দেওয়া হলোঃ L. C. Croper: The book in which a Trader’s Transactions are recorded in a classified permanent form is called the Ledger. অর্থাৎ যে বহিতে কারবারি লেনদেনসমূহ শ্রেণিবিন্যাস করে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। Hermanson and others: Ledger is the complete collection of all the accounts of an entity. অর্থাৎ সত্ত্বার যাবতীয় লেনদেনগুলোর সংগ্রহই খতিয়ান।
খতিয়ানের বৈশিষ্ট্যসমূহ (Features of Ledger):
খতিয়ান বহিতে কোন ধরণের বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ
১। হিসাবের শিরোনাম: প্রতিটি হিসাবের জন্য আলাদা আলাদা শিরোনাম থাকে। যেমন যন্ত্রপাতি হিঃ, ক্রয় হিঃ, বিক্রয় হিঃ ইত্যাদি।
২। নির্দিষ্ট ছক: খতিয়ান বহি প্রস্তুতের জন্য নির্দিষ্ট ছক ব্যবহার করা হয়। ছক দু’ধরণের। যথা । ছক এবং চলমান জের ছক।
৩। ডেবিট ও ক্রেডিট: ছককে দু’ভাগে বিভক্ত করা হয়। বাম দিকে ডেবিট এবং ডান দিকে ক্রেডিট টাকার পরিমাণ লেখা হয়
৪। তারিখঃ ছকে খতিয়ানের ডেবিট ও ক্রেডিট দিকে তারিখের ঘর থাকে। তবে চলমান জের ছকে তারিখের একটি মাত্র ঘর থাকে। এই ঘরে সংঘটিত লেনদেনের তারিখ লেখা হয়।
৫। জাবেদা পৃষ্ঠা: এই ঘরে জাবেদার পৃষ্ঠার নম্বর লিখতে হয়।
৬। জের টানা: খতিয়ান বহির ডেবিট এবং ক্রেডিটের পার্থক্য হবে ব্যালেন্স বা জের। যদি ডেবিট পার্শ্ব বেশী হয় তবে উহাকে ডেবিট জের বলে। আবার যদি ক্রেডিট পার্শ্ব বেশী হয় তবে উহাকে ক্রেডিট জের বলে।
৭। সমাপনী রেখাঃ খতিয়ান হিসাবের উদ্বৃত্ত নির্ণয়ের পর মোট টাকার নিচে দুটি সমান্তরাল রেখা (=) টানা হয়।
খতিয়ান বহির প্রয়োজনীয়তা (Necessity of Ledger):
হিসাব কার্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় বহি হচ্ছে খতিয়ান বহি। সমজাতীয় লেনদেনগুলো নির্দিষ্ট শিরোনামের অধীনে সাজিয়ে লেখা হয়। ফলে ব্যবসায়ের প্রয়োজনে যে কোন তথ্য এই বহিতে পাওয়া যায়। এজন্য আধুনিক হিসাব প্রক্রিয়ায় খতিয়ানের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
নিচে খতিয়ানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হলোঃ
১। পূর্ণাঙ্গ হিসাব: খতিয়ানে হিসাব খাতগুলোর দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির মাধমে ডেবিট এবং ক্রেডিট দিকে সমপরিমাণ টাকা দ্বারা পূর্ণাঙ্গ হিসাব রাখা হয়।
২। গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই: খতিয়ান হিসাবের উদ্বৃত্ত নিয়ে রেওয়ামিল প্রস্তুত করা হয় বলে হিসাবের গাণিতিক শুদ্ধতা যাচাই করা সম্ভব হয়
৩। দেনা-পাওনার পরিমাণ নির্ণয়ঃ বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাব পৃথকভাবে রাখা হয়। ফলে বছর শেষে মোট দেনা- পাওনা এবং সম্পত্তির পরিমাণ জানা যায়।
৪। প্রকৃত অবস্থা: প্রতিটি হিসাবের প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য খতিয়ান বহির প্রয়োজন।
৫। তথ্য ভান্ডার: হিসাব তথ্যের ব্যবহারকারীগণ যে কোন সময় তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য খতিয়ান বহি থেকে পেয়ে থাকেন।
৬। কারচুপি ও জালিয়াতি রোধ: সমজাতীয় হিসাবসমূহ একত্রকরণের ফলে হিসাবের কারচুপি ও জালিয়াতি রোধ হয়।
৭। তুলনামূলক বিশ্লেষণ: খতিয়ানে যে হিসাবসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয় তার সাথে অন্যান্য বছরের হিসাবের তুলনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়।
পরিশেষে বলা যায় যে, খতিয়ান বহি হচ্ছে ব্যবসায়ের দর্পন বা আয়না।
পাঠ-১৬. খতিয়ানভূক্তকরণ ও হিসাবের উৎস নির্ণয়
ভূমিকাঃ ব্যবসায়ে সংঘটিত লেনদেনগুলোকে দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির নীতি মোতাবেক ডেবিট এবং ক্রেডিট নির্ণয় করে হিসাবভূক্ত করা হয়। কাজেই হিসাবের খাত বা শিরোনাম নির্ণয় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হিসাবের উৎস: আপনি বাবার কাছ থেকে ৫,০০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলেন। বাজার হতে চাল ১,৬০০ টাকা, ডাল ২০০ টাকা এবং ১,২০০ টাকার মাছ ক্রয় করলেন। আপনার ব্যয় কত?
মোট ব্যয় (১৬০০+২০০+১২০০) বা ৩,০০০ টাকা।
এখন প্রশ্ন হলো ৩,০০০ টাকা কোন কোন খাতে ব্যয় হয়েছে। আপনি বলবেন চাল, ডাল এবং মাছ বাবদ ৩,০০০ টাকা ব্যয় হয়েছে। এখানে হিসাবের উৎস হবে ক্রয় হিসাব এবং নগদান হিসাব।
এখন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে চিন্তা করলে আমরা দেখতে পাই, কোন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের ব্যয়, আয়, সম্পদ ও দায় সংঘটিত হয়ে থাকে। মূলতঃ এগুলোর উপর ভিত্তি করে হিসাবের উৎস নির্ণয় করতে হবে।
নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
১। ব্যয় (Expenses): কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ফলে বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয় হয়ে থাকে। যে খাতে অর্থ ব্যয় হবে, সেই খাতই হবে হিসাবের শিরোনাম। যেমন- বেতন হিঃ, ভাড়া হিঃ ইত্যাদি।
২। আয় (Income): আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন খাতে আয় হয়ে থাকে। যে খাতে আয় হবে, সেই খাতই হবে হিসাবের শিরোনাম। যেমন- ভাড়া প্রাপ্তি, সুদ প্রাপ্তি ইত্যাদি।
৩। সম্পদ (Asset): ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য বিভিন্ন সম্পদের প্রয়োজন হয়। যে সকল সম্পদ ক্রয় করা হবে, ঐ সম্পদই হবে হিসাবের শিরোনাম। যেমন কলকব্জা হিঃ, আসবাবপত্র হিঃ ইত্যাদি।
৪। দায় (Liability): ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে দেনা থাকে। যাদের কাছে দেনা থাকে, তারাই হবে হিসাবের শিরোণাম। যেমন- পাওনাদার হিঃ, প্রদেয় বিল হিঃ ইত্যাদি।
খতিয়ানভুক্তকরণ (Ledger Posting)
ব্যবসায় সংঘটিত লেনদেনসমূহ দু’তরফা দাখিলা পদ্ধতির নীতি অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে জাবেদা বই এ লিপিবদ্ধ করা হয়। জাবেদা বহি হতে সমজাতীয় হিসাবসমূহ একটি নির্দিষ্ট শিরোনামের অধীনে স্থানান্তর করতে হয়।
খতিয়ান বহির ছককে দু’ভাবে অংকন করা যায়। যেমন ১। ৭ ছক, ২। চলমান জের ছক।
এইচএসসি হিসাববিজ্ঞান ১ম পত্রের ২য় অধ্যায় হিসাবের বইসমূহ নোট/গাইড PDF Download