লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন

এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র লালসালু উপন্যাসের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর PDF Download

Advertisements

এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর PDF। তোমাদের জন্য আজকে নিয়ে আসলাম ১০০% কমন উপযোগী লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর। এগুলো অনলাইনে পড়ার পাশাপাশি তুমি পিডিএফ ডাউনলোড করে অফলাইনে পড়তে পারবে । তাহলে চলো, শুরু করি লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর PDF।।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর PDF

০১। ‘মাটিরে কষ্ট দেওন গুনাহ্’— এ উক্তিটির প্রেক্ষাপট লেখ।

উত্তর: ‘মাটিরে কষ্ট দেওন গুনাহ’ কথাটি মজিদ রহিমার হাঁটার ধরন দেখে বলেছিলো।[ঢা.বো.’২৩]

মহব্বতনগর গ্রামে আসার পর মজিদ রহিমাকে বিয়ে করে। রহিমা লম্বা-চওড়া মানুষ। সে যখন হাঁটে, মাটিতে আওয়াজ হয়। যখন কথা বলে, মাঠ থেকে শোনা যায় গলা। তার হাঁটার এই ধরন মজিদের পছন্দ হয় না। তার মতে, মৃত্যুর পর যে মাটিতে ফিরে যেতে হবে সে মাটিতে আওয়াজ করে হাঁটতে হয় না। এ প্রসঙ্গেই মজিদ আলোচ্য উক্তিটি করে।

Advertisements

০২। ‘নাফরমানি করিও না। খোদার উপর তোয়াক্কল রাখ।’ ব্যাখ্যা কর। [ঢা.বো.’২৩]

উত্তর: ‘নাফরমানি করিও না। খোদার উপর তোয়াক্কল রাখো।’ উক্তিটি মজিদ গ্রামবাসীদের হাহাকারের জন্য করেছিলেন। শিলাবৃষ্টির কারণে মহব্বতনগর গ্রামের সব ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ক্ষেতের প্রান্তে লোক জমা হয় অনেক। কারও মুখে কথা নেই। মজিদকে দেখে একজন হাহাকার করে উঠে। কিন্তু বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে খোদার ওপর থেকে বিশ্বাস না হারানোর জন্য মজিদ সকলকে সচেতন করে। গ্রামবাসীদের হাহাকারের প্রত্যুত্তরেই মজিদ কঠিনভাবে আলোচ্য উক্তিটি করেছিল।

০৩। “তাই তারা ছোটে, ছোটে”–কেন? ব্যাখ্যা কর। [রা.বো.’২৩; কু.বো.’১৭]

উত্তর: আহারক্লিষ্ট গরিব মানুষের অভাবের তাড়নায় কাজের সন্ধানে ছুটে চলাকে নির্দেশ করে উক্তিটি করা হয়েছে। ‘লালসালু” উপন্যাসের পটভূমিতে আছে শস্যহীন জনবহুল একটি অঞ্চলের উল্লেখ। ভাগাভাগি, লুটালুটি এবং স্থানবিশেষে খুনাখুনি করে এখানে সকল প্রয়াস শেষ হয়। তখন তারা বেরিয়ে পড়ে নতুন এলাকার সন্ধানে, কাজের সন্ধানে। জ্বালাময়ী আশাকে চোখে জ্বেলে তারা শুধু ছোটে, ছোটে।

০৪। “গ্রামের লোকেরা যেন রহিমারই অন্য সংস্করণ।” —ব্যাখ্যা কর। [রা.বো.’২৩; সি.বো.’১৯; সকল বো.’১৮]

উত্তর: রহিমার মতোই গ্রামবাসীরা যে ঠান্ডা, ধর্মভীরু ও অনুগত, তা বোঝাতেই লেখক উক্তিটি করেছেন।

লম্বা-চওড়া শারীরিক শক্তিসম্পন্ন রহিমা প্রকৃতপক্ষে ঠান্ডা ও ভীতু প্রকৃতির লোক। তার এই ভীত-বিহ্বল, নরম শান্ত রূপের পেছনে সক্রিয় রয়েছে খোদাভীতি, মাজার-বিশ্বাস এবং মাজারের প্রতিনিধি হিসেবে স্বামীর প্রতি অন্ধ আনুগত্য ও ভক্তি। ধর্মভীরু লোকেরা ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের কারণে যে কোমল স্বভাবসম্পন্ন হয় রহিমা তারই একটি উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সমস্ত মহব্বতনগর গ্রামের মানুষেরাও রহিমার মতোই বিশ্বাসী। তাই সকলের ধর্মভীরু চরিত্র নির্দেশ করতে লেখক উক্তিটি করেছেন।

০৫। ‘ব্যাপারটা ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মতো’ – কোন ব্যাপারটা এবং কেন? [রা.বো, চ.বো.’২৩; চ.বো.’২২]

উত্তর: “ব্যাপারটা ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার মতো”– উক্তিটি মজিদকে রেখে আওয়ালপুরের পিরের নিকট পানি পড়া আনার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে।

খালেক ব্যাপারী তার স্ত্রীর জন্য মজিদের নির্দেশের বরখেলাপ করে আওয়ালপুরের ঠক পিরের কাছেই পানি পড়া আনবার জন্য লোক পাঠাবে-এ ঘটনা তার পছন্দ হয়নি। সে থাকতে গ্রামের লোক, আওয়ালপুরের পিরের কাছে যাওয়া আসা তার চিন্তার কারণ হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর তার খাতিরের লোক খালেক ব্যাপারীই এরকম একটি কাজ করতে চাওয়ায় বিষয়টিতে তুলনা করা হয়েছে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়ার সাথে।

০৬। ঔপন্যাসিক মজিদের গ্রামে প্রবেশকে নাটকীয় বলেছেন কেন?

উত্তর: ঔপন্যাসিক মজিদের গ্রামে প্রবেশকে নাটকীয় বলেছেন তার গ্রামে প্রবেশের ভঙ্গির জন্য।

শ্রাবণের শেষে নিরাক পড়া এক মধ্যাহ্নে মহব্বতনগর গ্রামে মজিদ প্রবেশ করে। গ্রামে প্রবেশের সময় সে মতিগঞ্জ সড়কের ওপর মোনাজাতের ভঙ্গিতে পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। গ্রামে প্রবেশ করার পরপরই সে খালেক ব্যাপারীর বাড়িতে গিয়ে সমবেত গ্রামের মানুষকে তিরস্কার করে, আপনারা জাহেল, বে এলেম, আনপাড়হ্! সে আরো বলে পিরের স্বপ্নাদেশে সে এখানে এসেছে। এসব ঘটনা নাটকীয়তার সঞ্চার ঘটায়। তাই ঔপন্যাসিক মজিদের গ্রামে প্রবেশকে নাটকীয় বলেছেন।

০৭। “সে বলে পির সাহেব সূর্যকে ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে।”— উক্তিটিতে কী প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তর: ‘সে বলে পির সাহেব সূর্যকে ধরে রাখার সক্ষমতা রাখে।’ এখানে ধর্মব্যাবসা এবং অন্ধবিশ্বাসের একটি দিক প্রকাশিত হয়েছে। আওয়ালপুরে পির সাহেবের প্রধান মুরিদ মতলুব মিয়া হুজুরের গুণাগুণ সহজ ভাষায় বলতে গিয়ে বলেন যে পির সাহেবের হুকুম ছাড়া সূর্য এক আঙুল নড়তে পারেনা। তার এ কথায় বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই কেবল পিরের প্রতি অন্ধবিশ্বাস থেকে তিনি এ কথা বলেন। মূলত ধর্মব্যবসায় সাধারণ মানুষের মধ্যে পিরের প্রতি ভক্তি ও শদ্ধা জাগ্রত করতে এ ধরনের কথা বলা হয় ।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

০৮। “এখন সে ঝড়ের মুখে উড়ে চলা পাতা নয়। সচ্ছলতায় শিকড়গাড়া বৃক্ষ।” –ব্যাখ্যা কর। [সি.বো.’২৩; রা.বো, চ.বো.’২২]

উত্তর: “এখন সে ঝড়ের মুখে উড়ে চলা পাতা নয়, সচ্ছলতায় শিকড় গাড়া বৃক্ষ।”— উক্তিটির মাধ্যমে মজিদের বর্তমান অবস্থান বোঝানো হয়েছে।

একদিন মসজিদে যাওয়ার সময় ধুলো উড়া মাঠের দিকে তাকিয়ে মজিদের অতীতের কথা মনে পড়ে। দশ বারো বছর আগে যখন সে এ গ্রামে এসেছিল তখন তার কিছুই ছিলনা। আজ তার অর্থ, সম্পদ সব হয়েছে। সে আশাবাদী তার ভবিষ্যৎ দিনগুলো নিয়ে। কারণ তার শেকড় সমাজের অনেক গভীরে প্রোথিত হয়েছে।

০৯। “বিশ্বাসের পাথরে যেন খোদাই সে চোখ।” -ব্যাখ্যা কর। [ব.বো.’২৩; ব.বো, কু.বো, ম.বো.’২২; চ.বো, য.বো.’১৯; কু.বো. ১৭

উত্তর: মজিদের প্রতি গ্রামবাসীর অবিনাশী বিশ্বস্ততার ও ধর্মান্ধতার বিষয়টি বোঝাতে উক্তিটি করা হয়েছে।

শিলাবৃষ্টির কারণে মহব্বতনগরের ধানক্ষেত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলে মজিদসহ সকলেই হতবিহব্বল হয়ে পড়ে। সকালে মজিদ যখন মাঠের ধান দেখতে বের হয় তখন একজন তাকে দেখে হাহাকার করে ওঠে। কিন্তু মজিদ তাদের খোদার ওপর বিশ্বাস রাখতে বললে সকলেই চুপ হয়ে যায়। তাদের স্থির দৃষ্টিতে তাদের মনের বিশ্বাসের দৃঢ়তা যেন স্পষ্ট ভাবেই প্রকাশ পায়।

১০। “তাগো কথা হুনলে পুরুষ মানুষ আর পুরুষ থাকে না, মেয়ে মানুষেরও অধম হয়।” কেন? বুঝিয়ে দাও ।

উত্তর: “তাগো কথা হুনলে পুরুষ মানুষ আর পুরুষ থাকে না মেয়ে মানুষেরও অধম হয়”– উক্তিটি মজিদের। খালেক ব্যাপারীর স্ত্রী আওয়ালপুরের পিরের পানি পড়া খেতে চেয়েছিলেন সন্তান লাভের আশায়। এতে সায় ছিল খালেক ব্যাপারীর। কিন্তু মজিদ যখন ঘটনাটি জানতে পারে তখন খালেক ব্যাপারী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে স্ত্রীকে জ্ঞানশূন্য ও মূর্খ হিসেবে উপস্থাপন করে মজিদের কাছে। তার কথায় সায় দিয়ে মজিদ বলে, পুরুষ মানুষেরা যদি মেয়ে মানুষের কথা শোনে তাহলে তারা মেয়ে মানুষেরও অধম হয়ে যায়।

১১। “শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি।” -ব্যাখ্যা কর। [য.বো.’২৩; সি.বো, কু.বো, ম.বো.’২২; ঢা.বো, রা.বো, কু.বো, দি.বো.’১৯; ঢা.বো, রা.বো, ব.বো, য.বো.’১৭]

উত্তর: ‘শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের চেয়ে আগাছা বেশি বলতে শস্যহীন জনবহুল অঞ্চলের ধর্মভীরু পরিবেশের কথা বোঝানো হয়েছে। এ অঞ্চলের লোকেদের ঘরে কিছু নেই। শস্য যা আছে তা অতিসামান্য। কিন্তু ভোরবেলায় এত মক্তবে আর্তনাদ উঠে যেন খোদা তা’আলার বিশেষ দেশ। পেটে ক্ষুধা থাকলেও শস্য উৎপাদনে প্রবৃত্ত না হয়ে শুধু অলৌকিক শক্তিতে ভরসা করে। প্রকৃত ধর্ম পালন না করে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষদের বোঝাতে ঔপন্যাসিক উক্তিটি করেছেন।

১২। “ধান দিয়া কী হইব মানুষের জান যদি না থাকে?”-উক্তিটিতে বক্তার মনোভাব ব্যাখ্যা কর। [য.বো ‘২৩; দি.বো.’২২, সকল বো.’১৮, চ.বো.’১৭]

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে রহিমার মধ্যে মাতৃত্ববোধ জেগে ওঠার দিকটি ফুটে উঠেছে। ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখতে মজিদ অমানবিক সব আচরণ করেছে প্রতিপক্ষের সাথে। তারই ধারাবাহিকতায় জমিলার মাঝে খোদাভীতি সৃষ্টি করতে এক ঝড়ের রাতে মজিদ তাকে মাজারে বেঁধে রেখে আসে। জমিলা সতীন হলেও রহিমার অন্তরে মাতৃত্ব বোধ সৃষ্টি হয়েছিল জমিলাকে কেন্দ্র করে। তাই সে জমিলার জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়। অপরদিকে স্বার্থপর মজিদ শিলাবৃষ্টিতে ধান ক্ষতিগ্ৰস্ত হওয়ার বিষয়ে বেশি চিন্তিত থাকে। এ পর্যায়ে জমিলাকে কেন্দ্র করে রহিমার মাতৃসত্তার বিকাশটি পূর্ণতা অর্জন করে এবং প্রতিবাদী হয়ে উঠে সে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

১৩। “কিন্তু মানুষের ফোঁড়া হইলে সে ফোঁড়া ধারালো ছুরি দিয়া কাটিতে হয়।”— কে, কোন প্রসঙ্গে বলেছে? [কু.বো.’২৩]

উত্তর: “কিন্তু মানুষের ফোঁড়া হইলে সে ফোঁড়া ধারালো ছুরি দিয়া কাটিতে হয়।”– একথা মজিদ তার দ্বিতীয় স্ত্রী জমিলাকে বলেছিল তার অবাধ্য হওয়ার জন্য।

“লালসালু” উপন্যাসে মজিদের প্রথম স্ত্রীর সন্তান না হওয়ায় সে আবার বিয়ে করে। কিন্তু তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিবাহের পর থেকেই বিভিন্নভাবে অবাধ্যতা শুরু করে। মজিদ একসময় তাকে বাধ্য করার জন্য মাজারে নিয়ে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখে। তারপর তাকে বুঝাতে থাকে যে জিনের আছর হলে বেত দিয়ে চাবকিয়ে, চোখে মরিচ দিতে হয়। এতে কষ্ট হলেও জিনের আছর চলে যায়। তার ধারণা ছিল এভাবে ভয় দেখালে অবাধ্য জমিলা বাধ্য হয়ে যাবে।

১৪। “শত্রুর আভাস পাওয়া হরিণের চোখের মতোই সতর্ক হয়ে ওঠে তার চোখ।”— কার চোখ, কেন?

উত্তর: ‘শত্রুর আভাস পাওয়া হরিণের চোখের মতোই সতর্ক হয়ে ওঠে তার চোখ” এখানে জমিলার কথা বলা – হয়েছে।

মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী জামিলা মজিদের ভয়ে ভীত নয়। সে তার মত চঞ্চলচিত্তে ঘুরে বেড়ায়। মজিদ বারবার ধর্মের দোহাই দিয়ে তাকে ভয় দেখাতে চাইলেও সে ভয় পায়না। হরিণ যেমন শত্রুর আভাস পেয়ে সচেতন হয় তেমনি জামিলাও বুঝতে পেরেছিল সে মজিদের খাঁচায় ধরা পড়েছে। কিন্তু তার ভেতরে প্রতিবাদী সত্তা জাগ্রত রয়েছে। এ প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

১৫। “খেলোয়াড় চলে গেছে, খেলবে কার সাথে ।” – কথাটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: “খেলোয়াড় চলে গেছে, খেলবে কার সাথে” কথাটি মায়ের ব্যাপার বলা হয়েছে।

তাহেরের বাপ-মায়ের সারাদিন একে অপরের সাথে ঝগড়া-ফ্যাসাদ লেগেই থাকত। এক-একদিন এমন অবস্থা হত যে খুনাখুনি হবার পর্যায়ে চলে যেত। বুড়ো বারবার তেড়ে আসলেও বুড়ি একজায়গায় বসে গালাগাল জুড়েদিত। কিন্তু একদিন তাহেরের বাপ নিরুদ্দেশ হয়ে গেলে তারপর থেকে তাহেরের মা চুপচাপ থাকে। তার ঝগড়া করবার মানুষটি আর নেই এ প্রসঙ্গেই আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

আরো পড়ুন :

১৬। “খোদার এলেমে বুক ভরে না তলায় পেট শূন্য বলে”—উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে? [দি.বো, ম.বো.’২৩]

উত্তর: “খোদার এলেমে বুক ভরেনা তলায় পেট শূন্য বলে” উক্তিটি দ্বারা মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থা বোঝানো হয়েছে। শস্যহীন জনবহুল মহব্বতনগর গ্রামের বাসিন্দারা অত্যন্ত ধর্মভীরু। ভোরবেলায় মক্তবে এত আর্তনাদ ওঠে যে মনে হয় এটি খোদাতা’লার বিশেষ দেশ। খোদাতালার ওপর প্রগাঢ় ভরসা তাদের। তাই ধর্মের জন্য তারা বেশ নিবেদিত। কিন্তু তলায় পেট শূন্য বলে খোদার এলেমে তাদের বুক ভরে না। মূলত আর্থিক দুরবস্থার কারণে মানসিক অস্থিতিশীলতা বোঝাতে আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

১৭। “যেন বিশাল সূর্যোদয় হয়েছে, আর সে আলোয় প্রদীপের আলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।”-ব্যাখ্যা কর। [ম.বো.’২৩; চ.বো.’১৯]

উত্তর: আওয়ালপুরে আগত পির সাহেব এবং মজিদের তুলনামূলক অবস্থান নির্দেশ করতে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে। আওয়ালপুরে নতুন পির সাহেবের আগমনে মজিদের প্রতিপত্তি কমে যায়। মজিদের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়ে যায়। মজিদ স্বচক্ষে আওয়ালপুরের পিরের কার্যাবলি দেখতে এবং নিজের অস্তিত্ব রক্ষার্থে গিয়ে হাজির হয় আওয়ালপুরে। তবে সেখানে পিরের প্রতিপত্তি ও জনপ্রিয়তা দেখে মজিদের নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয়। নিজের গ্রামের মানুষ পর্যন্ত তাকে দেখেও না দেখার ভান করে। এমন অবস্থায় মজিদ পিরকে সূর্যের সাথে এবং নিজেকে প্রদীপের সাথে তুলনা করে নিজের অবস্থান নির্ণয়ের প্রয়াস করেছে।

১৮। “মনে হয় এটা খোদা তা’লার বিশেষ দেশ।”–কেন? ব্যাখ্যা কর।[ঢা.বো.’২২]

উত্তর: শত অভাব থাকা সত্ত্বেও নোয়াখালীর শস্যহীন অঞ্চলের মানুষদের ধর্মভীরুতা এবং ধর্মীয় কাজে কোনো কার্পণ্য না দেখে লেখক ব্যঙ্গ করে এ কথা বলেছেন।

একটি শস্যশূন্য এলাকা যেখানে দীনতা আর অসহায়ত্বের সঙ্গে মানুষ যুদ্ধ করে সেখানে ভোর হতেই মক্তবে আর্তনাদ উঠে। তাদের খোদা তা’আলার উপর প্রগাঢ় ভরসা। এখানে শস্যের চেয়ে টুপি বেশি, ধর্মের আগাছা বেশি। ভোর বেলায় মক্তবে এত আৰ্তনাদ ওঠে যে, মনে হয় এটা খোদা তা’লার বিশেষ দেশ।

১৯। জমিলা কে? সংক্ষেপে তার পরিচয় দাও ।

উত্তর: জমিলা মজিদের দ্বিতীয় স্ত্রী।

জমিলা খুবই অল্পবয়সি একটি মেয়ে। সন্তান লাভের আশায় এবং নিজের শূন্যতা পূরণের জন্য মজিদ তাকে বিয়ে করে। কিন্তু প্রথম স্ত্রী রহিমার মতো জমিলা ধর্মের ভয়ে ভীত নয়। এমনকি, মাজারভীতি কিংবা মাজারের অধিকর্তা মজিদ সম্পর্কেও সে কোনো ভীতি বোধ করে না। তারুণ্যের স্বভাবধর্ম অনুযায়ী সে চঞ্চল, উচ্ছল। মজিদ তাকে বশে আনতে ব্যর্থ হয়।

২০। মজিদ আক্কাসকে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে বাধা দেয় কেন? [রা.বো.’২২]

উত্তর: মজিদ আক্কাসকে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে বাধা দেয় নিজের ধর্ম ব্যাবসাকে হুমকির হাত থেকে বাঁচাতে। মজিদ ভেবেছিল আক্কাস যদি গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠা করে তাহলে গ্রামের লোকজন শিক্ষা অর্জন করে সচেতন হয়ে যাবে এবং মজিদের ধর্ম ব্যাবসাকে ধরে ফেলবে। ফলে তার মাজার ব্যবসায় সংকট নেমে আসবে। তাই মজিদ আক্কাসকে স্কুল প্রতিষ্ঠা করতে দেয়নি।

২১। “সজ্ঞানে না জানলেও তারা একাট্টা, পথ তাদের এক।”— ব্যাখ্যা কর। উত্তর: নিজে চেষ্টা করো। [সি.বো.’২২]

উত্তর: মহব্বতনগর গ্রামে মজিদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের পেছনে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে প্রশ্নোল্লিখিত বাক্যটি। মহব্বতনগর গ্রামে প্রবেশের পর মজিদ প্রথমেই গ্রামবাসীদের নিয়ে বৈঠকে বসে এবং মোদাচ্ছের পিরের-মাজারকে অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখার জন্য তাদের জ্ঞানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। মূলত, কবরটি কার তা মজিদ নিজেও জানেনা। কিন্তু গ্রামবাসীদেরকে সেই কবর অবহেলায় ফেলে রাখার কারণ জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে মজিদ তাদের মধ্যে নিজেদের অজ্ঞতা ও মজিদের পাণ্ডিত্য সম্পর্কে যে ধারণা সৃষ্টি করে, সেটিই পরবর্তীতে তার সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিপত্তি বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

২৩। রহিমার পর্বতের মতো অটল বিশ্বাসে ফাটল ধরে কেন? আলোচনা কর। [য.বো.’২২]

উত্তর: মজিদের অমানবিকতা ও নির্মমতা রহিমার পর্বতের মতো অটল বিশ্বাসে ফাটল ধরায়।

‘লালসালু” উপন্যাসে রহিমা মজিদের সাথে বিয়ের পর থেকে স্বামীভক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। শান্ত ও নিরীহ প্রকৃতির রহিমা মজিদের ধর্মীয় লেবাসকে আরও বেশি ভক্তি, শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের সাথে দেখে। কিন্তু ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখার মোহ মজিদকে করে তোলে অমানবিক ও পশুতুল্য যার চূড়ান্ত প্রকাশ লক্ষ করা যায় জমিলার প্রতি তার আচরণে। জমিলার উপর নির্যাতনের নির্মমতা দেখে রহিমার পর্বতের মতো অটল বিশ্বাসে ফাটল ধরে।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

২২। “আপনারা জাহেল, বে-এলেম, আনপাড়হ্”–এই উক্তিটির তাৎপর্য লেখ।

উত্তর: তাহেরের বাপ তার ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদাবোধ রক্ষার্থে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়।

তাহেরের বাপ এমন এক চরিত্র যে মজিদের আধ্যাত্মিক শক্তির ব্যাপারে অবিশ্বাস পোষণ করেছে, বিচার সভায় প্রদর্শন করেছে অনমনীয় দৃঢ়তা ও ব্যক্তিত্ব। পারিবারিক বিষয় গ্রামের বিচার সভায় উঠে আসলে তার ব্যক্তিত্বের স্ফুরণ লক্ষ করা যায়। মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইলেও তা মজিদের প্রতি শ্রদ্ধাবশত করে নি, বরং মানবিক দায়িত্ববোধ থেকেই সে এ কাজ করে। তার নিরুদ্দেশ হওয়ার মাঝে মজিদ নিয়ন্ত্রিত সমাজের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ব্যক্ত হয়েছে। মূলত, তার ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদা রক্ষার্থেই সে নিরুদ্দেশ হয়েছিল।

২৫। “সময়-অসময়ে মিথ্যে কথা না বললে নয়”— উক্তিটির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরো।

উত্তর: নিজে চেষ্টা করো। [দি.বো.’২২]

২৬। “জমিলা যেন ঠাটাপড়া মানুষের মতো হয়ে গেছে” —বাক্যটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: নিজে চেষ্টা করো ।

২৭। “কেবল ধীরে ধীরে কাঠের মত শক্ত হয়ে ওঠে তার মুখটা” –কার মুখ শক্ত হয়ে ওঠে এবং কেন?

উত্তর: মজিদের অমানবিক অত্যাচারের বিরুদ্ধে জমিলার নীরব প্রতিবাদকে লেখক প্রতীকায়িত করেছেন প্রশ্নোক্ত চরণটির মাধ্যমে। কিশোরী জমিলার বিয়ে হয় মাঝবয়সি মজিদের সাথে। একরাতে মগরবের নামাজের পর জমিলা ঘুমিয়ে পড়ায় প্রচণ্ড রাগে মজিদ তাকে ঘুম থেকে একটানে উঠিয়ে বসায়। জমিলার চঞ্চল মনে খোদাভীতি সৃষ্টির জন্য শারীরিক অত্যাচারের পাশাপাশি মানসিক ভাবেও চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু জমিলা মজিদের এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিজেকে প্রতিবাদী করে তোলে নীরবে। তার নীরব এই প্রতিবাদের প্রতীক ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে ওঠা তার মুখটা।

২৮। ‘দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা’ –কথাটি কখন এবং কোন প্রসঙ্গে করা হয়েছে? [সি.বো, ব.বো.’ ১৯]

উত্তর: নিজের প্রতিপত্তি বজায় রাখতে মজিদ করিমগঞ্জ হাসপাতাল থেকে ফিরে কালুর বাপকে একটি মিথ্যা কথা বলে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করা হয়েছে। – এ প্রসঙ্গে

আওয়ালপুরের পিরের সঙ্গে বিবাদের ফলে মহব্বতনগরের কয়েকজন যুবক আহত হয়ে করিমগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হয়। মজিদ নিজের অবস্থানকে দৃঢ় করতে আহতদের দেখতে যায় করিমগঞ্জের। সেখানে বড় ডাক্তারের সাথে কোনো যোগাযোগ না করলেও গ্রামে ফিরে মিথ্যা কথা বলে কালুর বাপকে। তখন মজিদের আত্মোপলব্ধি ফুটে উঠেছে প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে। তার মতে দুনিয়াটা বড় বিচিত্র জায়গা। এখানে সময়-অসময়ে মিথ্যা কথা না বললে নয়।

লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর

২৯। গ্রামে আক্কাসের স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন কীভাবে ভেঙে যায়? [ব.বো.’ ১৯]

উত্তর: নিজে চেষ্টা করো।

৩০। কোন ঘটনায় মজিদ ‘বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ’ করে?

মজিদ যে লোকের কবরকে মাজার বানিয়ে ধর্ম ব্যবসা শুরু করেছে তাকে চেনে না বলেই মজিদ বিস্ময়করভাবে নিঃসঙ্গ বোধ করে । মজিদ মহব্বতনগর গ্রামে এসে আত্মপ্রতিষ্ঠা করে এক অপরিচিত লোকের কবরকে মাজারে পরিণত করে। যে মাজার তাকে সব দিয়েছে, একদিন সন্ধ্যায় দোয়া-দরুদ পড়ার সময় মজিদ লক্ষ করে মাজারের ঝালরওয়ালা সালুকাপড়ের এক কোনা উল্টানো, যা মৃত মানুষের চোখের মতো দেখতে। তখন তার স্মরণ হয়, যে মানুষটির মাজার তাকে সব দিয়েছে, সেই লোকটিকেই সে চেনে না। তখন তার মাঝে সৃষ্টি হয় বিস্ময়কর নৈঃসঙ্গ।

৩১। “দলিল দস্তাবেজ জাল হয়, কিন্তু খোদাতালার কালাম জাল হয় না।”—বুঝিয়ে লেখ। [কু.বো’ ১৯, রা.বো.’১৭]

উত্তর: ধলা মিঞা মজিদের পানিপড়া আওয়ালপুরের পিরের নামে চালিয়ে দেওয়ার কথা বললে মজিদ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করে। খালেক ব্যাপারীর স্ত্রী আমেনা বিবির মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য আওয়ালপুরের পিরের কাছ থেকে পানিপড়া আনতে বলেন ধলা মিয়াকে। আওয়ালপুরের পির মজিদের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় ধলা মিঞাকে রাতের অন্ধকারে কাজটি করতে বলেন ব্যাপারী। কিন্তু ভীতু প্রকৃতির লোক ধলা মিয়া আওয়ালপুর না গিয়ে মজিদের শরণাপন্ন হয় এবং তার কাছ থেকে পানি পড়া নিয়ে তা সেই পিরের নামে চালিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এমন হঠকারিতাপূর্ণ কথায় রেগে গিয়ে মজিদ উক্তিটি করেন।

৩২। মজিদের মুখে কে থুথু দিয়েছিলে? কেন? [রা.বো., চ.বো., ব.বো., কু.বো.’১৮;চ.বো” ১৭]

উত্তর: মজিদের মুখে জমিলা থুথু দিয়েছিল।

‘লালসালু’ উপন্যাসে মজিদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে সবচেয়ে সক্রিয় হলো জমিলা। মজিদের ধর্মীয় আবেশকে সকলে ভয় পেলেও জমিলা পায় না। তাই মজিদ জমিলার মাঝে ভীতি সঞ্চারের জন্য এক ঝড়ের রাতে মাজারে রেখে দিতে যায়। জমিলা মজিদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বেঁকে বসে এবং জোর করে মজিদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায়। কিন্তু তা না পেরে শেষ পর্যন্ত মজিদের অত্যাচারের প্রতিবাদে সে মজিদের বুকের কাছে এসে তার মুখে থু থু নিক্ষেপ করে ।

৩৩। “গ্রামের মানুষ যেন রহিমারই অন্য সংস্করণ।” ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: নিজে চেষ্টা করো।


এইচএসসি বাংলা ১ম পত্র লালসালু উপন্যাসের অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর PDF Download

Facebook
X
LinkedIn
Telegram
Print

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Stay Connected

Subscribe our Newsletter

Scroll to Top